ভারত ও পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আকাশ ও স্থলপথে সংঘাত অচিরে থেমে যাওয়ার লক্ষণ কম। ভারতের দাবি, উসকানি তো দিচ্ছে পাকিস্তান। পহলগামে নিরপরাধ পর্যটকদের ঠান্ডা মাথায় খুন করে যে উসকানির সূচনা করেছিল ইসলামাবাদ। ভারত শুধু উসকানির জবাব দিচ্ছে। দুটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের এই সংঘাতের আঁচ কমাতে ইতিমধ্যে রাষ্ট্রসংঘ বার্তা দিয়েছে। কিন্তু তাতে ইসলামাবাদ কর্ণপাত করেনি। উলটে পাকিস্তানি সেনা, আইএসআই, শাহবাজ শরিফের সরকার নিজেদের ঠুনকো অহংয়ে ভারতের পায়ে পা দিয়ে সংঘাত পরিস্থিতি চরমে নিয়ে যাচ্ছে।
দেশের পশ্চিম প্রান্তে যুদ্ধের দামামার মধ্যে উদ্বেগের মেঘ তৈরি হচ্ছে ভারতের পূর্ব প্রান্তে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়ে। গতবছর অগাস্টে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রভাব বেড়েছে পাকিস্তানপন্থী জামাত বাহিনীর। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনস্বীকার্য অবদান, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে এখন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ভুলিয়ে দিতে সচেষ্ট। বাঙালি জাতীয়তাবোধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলে বাংলাদেশে ক্রমশ জাল ছড়াচ্ছে উগ্র, ধর্মান্ধ মৌলবাদী চিন্তাধারা। যার প্রধান বিষয়ই হল ভারত বিদ্বেষ।
পহলগামে জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাক সংঘাতের মধ্যে বাংলাদেশের একাংশ ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়িয়ে ভারত বিরোধিতার অস্ত্রে শান দিচ্ছে। অথচ পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বরাবর ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সদ্ভাব ও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। শেখ হাসিনার আমলে ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে আচরণ করে গিয়েছে বাংলাদেশ। যা সেখানকার পাকিস্তানপন্থীদের কখনও পছন্দ ছিল না।
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতবিরোধী শক্তিগুলিকে উৎখাত করেছিলেন হাসিনা। কিন্তু পালাবদল হতেই সেই শক্তিগুলি ফের মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। একদিকে লাগাতার হিন্দু নিপীড়ন, অন্যদিকে ভারত বিরোধিতার তাসে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে চাইছে বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থী দলগুলি। হাসিনা আমলে জেলবন্দি জঙ্গি নেতাদের মুক্তি দিয়েছে ইউনূস সরকার।
আইএসআইয়ের গুপ্তমন্ত্রে ভারতবিদ্বেষের বিষবৃক্ষে ক্রমাগত জল, সার ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশে। হামাস এবং আইএসআই গাঁটছড়া বেঁধে বাংলাদেশকে জঙ্গিদের নতুন চারণভূমি হিসেবে গড়ে তুলছে। যা ভারতের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধজিগির তুললেও বাংলাদেশ ভালোভাবে জানে, ভারতের সামরিক শক্তির সঙ্গে তারা কখনও পেরে উঠবে না। ভারতের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের রাস্তায় হাঁটার সাহস এবং সামর্থ্য, কোনওটাই বাংলাদেশের নেই।
কিন্তু সন্ত্রাসবাদের আঁতুড় পাকিস্তান হাসিনার অনুপস্থিতিতে তৎপরতা বাড়ানোয় ভারতবিরোধী শক্তিগুলির নতুন আস্তানা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত থাকায় এবং যার অনেকখানি অংশ এখনও অরক্ষিত থাকায় পূর্ব প্রান্তের এই পড়শি দেশকে নিয়ে ভারতের মাথাব্যথার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের পাকিস্তানপন্থীদের নজরে সবসময়ই থাকে শিলিগুড়ির কাছে চিকেন নেক।
নজর যে ত্রিপুরার দিকেও থাকে, চিনে গিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে নিয়ে ইউনূসের উসকানিমূলক মন্তব্যে বাংলাদেশের অভিপ্রায় বুঝতে অসুবিধা হয় না। চিন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ অক্ষ ভারতের কাছে কখনও স্বস্তিদায়ক নয়। ভারতকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলার লক্ষ্য চিনের নতুন নয়। পাকিস্তান আগেই সেই লক্ষ্যপূরণের শরিক হয়েছিল। এবার বাংলাদেশও শামিল হতে শুরু করেছে।
উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের মতো দেশের পূর্ব প্রান্তেও তাই নজরদারি বাড়াচ্ছে ভারত। পশ্চিমবঙ্গ সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সমস্ত রাজ্য সরকারকে সঙ্গে নিয়ে তাই কেন্দ্রের উচিত, দেশের পূর্ব সীমাকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা। এই কাজে সামান্য ঢিলেমিও ভারতের সুরক্ষাব্যবস্থায় আঁচ ফেলতে পারে। ভারতীয় উপমহাদেশের ভূ-রাজনীতির অভিমুখ এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে।