কিশনগঞ্জঃ গল্পে শোনা যেত ডাকাতি করার আগে ডাকাতদল কালি মায়ের পুজো করত। এবার গল্পটা একটু অন্যরকম। মহাকুম্ভে পূণ্যস্নান করে এসে চুরি করতে গিয়েছিল একদল দুষ্কৃতী। চুরিতে সফল হলেও শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে দুষ্কৃতীরা বর্তমানে জেলবন্দি। এমনই ঘটনা ঘটেছে কিশনগঞ্জে। সম্প্রতি কিশনগঞ্জ স্টেশন লাগোয়া এক রেলের ঠিকাদারের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ পাকড়াও করে তিন দুষ্কৃতীকে। ধৃতের হেপাজত থেকে দুই দফায় উদ্ধার হয় চুরি যাওয়া লক্ষ লক্ষ টাকার সামগ্রী। এই দলের সঙ্গে যুক্ত অন্যদের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কুর্ণিশ জানিয়েছেন শহরবাসী।
জানা গিয়েছে, গত ২৫ জানুয়ারি চুরির ঘটনা ঘটে কিশনগঞ্জ সদর থানা লাগোয়া রেলগুদামের কাছে। সেই সময় বাড়ির মালিক পেশায় ঠিকাদার রামনাথ চৌধুরী পরিবার নিয়ে বিশেষ কাজে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে চোরের দল তালা ভেঙে ঢুকে ঘরের যাবতীয় মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে চম্পট দেয়। খবর পেয়ে বাড়ির মালিক ফিরে এসে কিশনগঞ্জ থানায় চুরির অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পরই ঘটনার তদন্তে নামে কিশনগঞ্জ থানার পুলিশ। পুলিশ সুপারের নির্দেশে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গৌতম কুমারের নেতৃত্বে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়। এলাকার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে পুলিশ। এরপরই দুষ্কৃতীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাদের ধরতে জাল বিছায় পুলিশ। সেই জালেই ধরা দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতদের হেপাজত থেকে উদ্ধার হয় ২ কেজি ৪১৮ গ্রাম রুপোর অলঙ্কার, ৩৫.৫২ গ্রাম সোনার অলঙ্কার, একটি বাইক, নগদ ১লক্ষ ২৮ হাজার টাকা ও চারটি মোবাইল ফোন। ধৃতরা হলেন বাপী সিং, অমিত বাল্মিকী, নেপাল কর্মকার। এরা প্রত্যেকেই উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা। এদের প্রত্যেককে হেপাজতে নেয় পুলিশ।
হেপাজতে নেওয়ার পরই টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, আরও প্রচুর চুরি যাওয়া সামগ্রী মাটির নীচে লুকোনো আছে ধৃত বাপী সিংয়ের বাড়িতে। এরপরই গতকাল রাতেই পুলিশ হানা দেয় ইসলামপুর থানা এলাকার বীরবল ডাঙ্গী গ্রামে বাপী সিংয়ের বাড়িতে। বাড়ির পিছনে মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে রাখা ছিল আরও বহু অলঙ্কার। কিশনগঞ্জ থানার পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
এই ঘটনায় দ্বিতীয়বার সাংবাদিক সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার সাগর কুমার। এদিন তিনি বলেন, ধৃতরা মহাকুম্ভে পূণ্যস্নান করে এসে কিশনগঞ্জে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। ধৃত তিনজনই উত্তরবঙ্গের ইসলামপুই ও মাটিগাড়া থানা এলাকার বাসিন্দা। প্রথম দফায় ধৃতদের হেপাজত থেকে উদ্ধার হয়েছিল ২ কেজি ৪১৮ গ্রাম রুপোর অলঙ্কার, ৩৫.৫২ গ্রাম সোনার অলঙ্কার, একটি বাইক, নগদ ১লক্ষ ২৮ হাজার টাকা ও চারটি মোবাইল ফোন। ধৃতদের হেপাজতে নিয়ে পুলিশ দ্বিতীয় দফায় উদ্ধার করে ১১৯ গ্রাম সোনার ৪ কেজি ৩৬৭ গ্রাম রূপার ও প্রচুর হীরার অলঙ্কার। যার বাজার দর আনুমানিক ৩০ লক্ষ টাকা। এই চুরির ঘটনার পিছনে বাড়ির মালিকের এক কর্মী জড়িত রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাঁর খোঁজেও তল্লাশি চলছে।