নয়াদিল্লি: পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন। প্রায় ভেন্টিলেশনে ঢুকে গিয়েছে রোগী। এহেন রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ।কিন্তু কথাতেই তো রয়েছে, আশায় বাঁচে চাষা। সেই ‘চাষা’ এখন আজিঙ্কা রাহানের কলকাতা নাইট রাইডার্স। চলতি অষ্টাদশ আইপিএলে রাহানের দলের কিছুই ঠিকমতো চলছে না। সাজঘরের ক্রিকেটীয় পরিকল্পনা মাঠে কার্যকর হচ্ছে না। কখনও প্রকৃতির রোষেও পড়তে হচ্ছে। যার উদাহরণ, ঘরের মাঠে দিন দুয়েক আগে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ। যেখানে খেলা বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ার ফলে এক পয়েন্টেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কেকেআরকে। সঙ্গে দলের ব্যাটিংয়ের ‘শনির’ দশা কেটেছে কিনা, সেই প্রশ্নের জবাবও জানে না ক্রিকেটমহল।
এমন অবস্থার মধ্যে আগামীকাল রাজধানীর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে কেকেআর। কালকের ম্যাচের আগে দুই দলের পরিস্থিতি, আবহ সম্পূর্ণ আলাদা। গত রাতে ঘরের মাঠে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর কাছে হেরে গিয়েছেন অক্ষর প্যাটেলরা। সেই হারের ‘খলনায়ক’ হিসেবে সামনে এসেছে দিল্লি শিবিরে থাকা বাংলার দুই প্রতিনিধি অভিষেক পোড়েল ও মুকেশ কুমার। অভিষেক বাউন্ডারিতে ফিল্ডিংয়ের সময় ক্রুণাল পান্ডিয়ার সহজ ক্যাচ মিস করেছিলেন। আর ডেথ ওভারে নিয়মিতভাবে ফুলটস বোলিং করে বেঙ্গালুরুর জয় নিশ্চিত করে দেন দিল্লির মুকেশ। কেকেআরের বিরুদ্ধে রাজধানী ফ্র্যাঞ্চাইজির দলে থাকা বাংলার দুই প্রতিনিধি কেমন করেন, সেদিকে নিশ্চিতভাবেই নজর থাকবে ক্রিকেট সমাজের।
যদিও ক্রিকেটীয় বিচারে নাইটদের সামনে ‘কাঁটা’ হিসেবে হাজির লোকেশ রাহুল ও মিচেল স্টার্ক। চলতি অষ্টাদশ আইপিএলে রাহুল দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন। নিয়মিতভাবে ভরসা দিচ্ছেন দিল্লি ক্যাপিটালসকে। ৮ ম্যাচে ৩৬৪ রান যার প্রমাণ। এহেন রাহুল সোমবারও নাইটদের সামনে নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য তৈরি। আর রয়েছেন প্রাক্তন নাইট স্টার্ক। শেষ মরশুমে স্টার্ক ছিলেন কেকেআরে। অদ্ভূতুড়ে কারণে স্টার্ককে রিটেইন করেনি নাইট কর্তৃপক্ষ। সেই স্টার্ককে আগামীকাল সামলাতে হবে রাহানে, ভেঙ্কটেশ আইয়ারদের। পারবেন ছন্দহীন নাইট ব্যাটাররা? আজ সন্ধ্যার দিকে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হয়ে কেকেআরের জোরে বোলার হর্ষিত রানা খুব একটা ভরসা দিতে পারেননি। বলেছেন, ‘দল হিসেবে খুব একটা ভালো জায়গায় নেই আমরা। এমন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য জয় প্রয়োজন আমাদের। দেখা যাক আগামীকাল কী হয়।’
হর্ষিতের কথাতেই স্পষ্ট, নাইট শিবিরের আত্মবিশ্বাস তলানিতে। শুধু তাই নয়, শেষবার দল যখন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেই সময় মেন্টর গৌতম গম্ভীরের ভূমিকা ছিল বিশাল। গম্ভীর এখন টিম ইন্ডিয়ার হেডস্যর। ভারতীয় ক্রিকেট সংসারের বাইরে নাইটদের অন্দরে গম্ভীরকে এখন ‘মিস’ করছেন হর্ষিত। তাঁর কথায়, ‘আমাদের দলে অনেক বদল হলেও কোচ ও সাপোর্ট স্টাফরা প্রায় একই রয়েছেন। অভিষেক নায়ারও ফিরে এসেছেন। শুধু গোতিভাই নেই। দলের অন্দরে ওঁর একটা প্রভাব ছিল। সেটা এবার নেই। যদিও এমন ভাবনাটা একেবারেই ব্যক্তিগত আমার। কিন্তু এটাই আমার বিশ্বাস।’ গম্ভীরের অনুপস্থিতি নাইটদের অন্দরে যে প্রভাব ফেলেছে ভালোরকম, সেই কথা কারও অজানা নয়। হর্ষিত বিষয়টি নিয়ে আজ শুধু মুখ খুলেছেন। তাছাড়া হর্ষিত তাঁর ঘরের মাঠে (দিল্লির ছেলে হর্ষিত) খেলতে নামার আগে নাইটদের নয়া শুরুর বার্তাও দিয়েছেন আজ। কিন্তু সেই বার্তার পরও কোচ চান্দু স্যরের সঙ্গে মেন্টর ডোয়েন ব্রাভো ক্রিকেট দর্শনের বিভাজন দলের অন্দরে বিস্তর সমস্যা তৈরি করে দিয়েছে। যার শেষটা কী হয়, সেটাই দেখার।
৯ ম্যাচে ৭ পয়েন্টে থাকা কেকেআর কীভাবে আগামীকাল নয়া শুরু করবে, সময়ই তার জবাব দেবে। কিন্তু তার আগে কুলদীপ যাদবদের বিরুদ্ধে দলের ব্যাটিং অর্ডার থেকে শুরু করে কম্বিনেশন, সবকিছু নিয়েই প্রবল অস্বস্তিতে রয়েছেন রাহানেরা। কোচ পণ্ডিতের স্ট্র্যাটেজিরও সমালোচনা চলছে। সুনীল নারায়ণ, বরুণ চক্রবর্তীর রহস্য স্পিনে যে রোজ সাফল্য আসবে না, সেটাও প্রমাণিত। তাই ‘মঙ্গলে শনির দশা’ কেটে নাইটদের নতুন শুরু হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার।