নির্মল ঘোষ, কলকাতা: শিলিগুড়িতে রামকৃষ্ণ মিশনে ঢুকে দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই এবার চার্চের অধীনে থাকা একটি নার্সিং কলেজে ঢুকে দাদাগিরির অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খাস কলকাতা শহরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাদাগিরির এই অভিযোগ নিয়েই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কলকাতায় চার্চ সংগঠন ‘ডায়োসেস অফ ক্যালকাটা’-এর বিশপ প্রতিকার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ কলকাতা পুরসভার ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তথা ১৬ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যান সুদীপ পোল্লের বিরুদ্ধে। সুদীপবাবুর পালটা বক্তব্য, চার্চ কর্তৃপক্ষের বেআইনি কাজের প্রতিবাদ করেছেন তিনি।
‘ডায়োসেস অফ কলকাতা চার্চ’–এর অধীনে বেহালার ডায়মন্ড হারবার রোডের বরিশায় আছে অক্সফোর্ড মিশন চার্চ। এই চার্চে ঢুকেই তৃণমূল কাউন্সিলার দাদাগিরি করেছেন বলে অভিযোগ। কলকাতার বিশপ রেভারেন্ড পরিতোষ এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়রকে নিরাপত্তা চেয়ে চিঠিও দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, চার্চের অধীনে ‘সিস্টার ফ্লোরেন্স কলেজ অফ নার্সিং’ নামে একটি নার্সিং প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে। ওই কলেজের বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে। অক্সফোর্ড মিশন কর্তৃপক্ষ সেই সমস্ত ভেঙে পড়া বিল্ডিংয়ের মেরামতির অনুমতি চেয়ে বোরো অফিসে চিঠি দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু সেই চিঠির অনুমোদন এখনও আসেনি। উলটে কাউন্সিলার সুদীপ পোল্লে এসে মেরামতির কাজ করতে বারণ করেন। যে ঠিকাদার কাজ করছিলেন, তাঁকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। উল্লেখ্য, নার্সিং কলেজের পাশেই চার্চের ভিতরে একটি রাস্তা ও মাঠ আছে। রোজ সকালে বহু মানুষ সেই মাঠে আসতেন। কিন্তু তাঁরা চার্চের ভিতরের মাঠে এসে নানা অপ্রীতিকর কাজ করতেন বলে অভিযোগ। এর জন্য মাঠে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের ঢোকা নিষেধ করে দেয় চার্চ কর্তৃপক্ষ। এই বিষয় নিয়েই প্রতিবাদ করেন কাউন্সিলার সুদীপ পোল্লে। মাঠের দরজা বন্ধ রাখা যাবে না বলে তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার জেরেই নার্সিং কলেজের বিল্ডিংয়ে সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে চার্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে সুদীপ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ওই চার্চ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা বেআইনি কাজের অভিযোগ আসছিল। জলাশয় ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছিল। এই বিষয়ে পুরসভা চার্চ কর্তৃপক্ষকে নোটিশও দেয়। কিন্তু চার্চ কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেননি। সুদীপ বলেন, ‘পুলিশ ও পুরসভার কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে চার্চে গিয়ে কাজ বন্ধের কথা বলা হয়েছিল।’ সুদীপবাবুর দাবি, অভিযোগ পেয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনি গোটা বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছেন। একবছর আগেই পুরসভা নার্সিং কলেজের কাজ বন্ধের নোটিশ দিয়েছিল। কিন্তু কাজ বন্ধ না করে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। চার্চ কর্তৃপক্ষ অবশ্য কাউন্সিলারের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে। কোনও জলাশয় বোজানো হচ্ছে না, সৌন্দর্যায়ন করা হচ্ছে বলে চার্চ কর্তৃপক্ষের দাবি। তৃণমূল কাউন্সিলারের এই ‘দাদাগিরি’-র তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিজেপি কাউন্সিলার সজল ঘোষ বলেন, ‘তৃণমূল কাউন্সিলারদের কেউ বিশপকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন, কেউ বলেন পোপকে দেখে নেবেন। আসলে এঁদের কেউ জয়ন্ত, কেউ শাহজাহান। এঁদের জন্য নিজেকেও কাউন্সিলার বলতে লজ্জা লাগে। টাকা না পেয়ে এইসব করা হচ্ছে।’