দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: ভোটের মুখে রায়গঞ্জের (Raiganj) মানুষকে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রায়গঞ্জ-বারসই সড়কপথ হবে, কৃষি ভিত্তিক শিল্প হবে, নতুন জায়গায় নতুন সাজে বাসস্ট্যান্ড হবে। কিন্তু হল কই ? কখনও বড় ফুল, কখনও জোড়া ফুলে ঘর বেঁধেছেন কৃষ্ণ কল্যাণী। পালটি মারায় সিদ্ধহস্ত তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর (Krishna Kalyani) প্রসঙ্গ তুললে এখন রায়গঞ্জের মানুষ বলেন, প্রতিশ্রুতির ধ্বজা উড়িয়ে দল বদলের শিল্প গড়েছেন তিনি। যদিও কৃষ্ণর দাবি, “সব প্রতিশ্রুতিই পূরণ হবে। আমি যেটা প্রতিশ্রুতি দিই সেটা পূরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি।”
২০২১-এর এই জানুয়ারি মাসেই বিজেপিতে যোগ দিয়ে কৃষ্ণর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তার আগে রাজনীতির ত্রিসীমানায় তাঁর নাম কখনও শোনা যায়নি। তাঁর একমাত্র পরিচয় ছিল উদ্যোগপতি হিসেবে। ২০২০-তে করোনা কালে আচমকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ২৫ লক্ষ টাকা দান করায় গুঞ্জন শুরু হয়, এবার বুঝি প্রয়াত বাবা তৃণমূল নেতা দীনদয়াল কল্যাণীর পদাঙ্কন অনুসরণ করে রাজনীতির খাতায় নাম লেখাতে চলেছেন রায়গঞ্জের প্রভাবশালী এই ‘সওদাগর’।
কিন্তু ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সবার ভাবনায় জল ঢেলে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন কৃষ্ণ কল্যাণী। অচিরেই রায়গঞ্জের তৎকালীন সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেও প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর কয়েক হাজার অনুগামী নিয়ে সরাসরি পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেন কৃষ্ণ। শুরু হয় তাঁর নতুন পথ চলা। বিধানসভা ভোটে রায়গঞ্জ থেকে বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হয়ে সম্মুখ সমরে নামেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তথা সেই দলের জেলা সভাপতি কানাইয়া লাল আগরওয়ালের সঙ্গে। প্রথম ভোটেই বাজিমাত। প্রায় ২০ হাজার ভোটে কানাইয়াকে পরাজিত করেন কৃষ্ণ। কিন্ত ১০ মাস যেতে না যেতেই ভোল বদল। বিজেপির যে নেতাদের হাত ধরে যোগ দিয়েছিলেন পদ্ম শিবিরে, তাঁকদেরকেই নানা অভিযোগে বিদ্ধ করে দল বদল করে যোগ দেন তৃণমূলে।
এদিকে রায়গঞ্জের তৃণমূল নেতাদের একাংশ আবার সহজভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না কৃষ্ণকে। ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয় তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের সঙ্গেও। তবে জেলার নেতৃত্বদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য নেতৃত্বের সুনজরে পড়েন কৃষ্ণ। ফলে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান, টি বোর্ডের সদস্য এবং রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির সহ সভাপতি পদও পান।
২০২৪-এ লোকসভার দামামা বাজতেই রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ঘুরপাক খেতে থাকে কৃষ্ণের নাম। দলের পুরোনো সমস্ত নেতৃত্বকে পিছনে ফেলে দিয়ে রায়গঞ্জ আসনে রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন। বিজেপির বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এবার তিনি জোড়া ফুল প্রতীকে প্রার্থী হন রায়গঞ্জ লোকসভা আসন থেকে। যদিও বিজেপি প্রার্থী কার্তিক চন্দ্র পালের কাছে তিনি প্রায় ৬৯ হাজার ভোটে পরাজিত হন। মাস খানেক যেতে না যেতেই রায়গঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়। আবার সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়ে বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হন কৃষ্ণ। তাঁর জয়ের মধ্যে দিয়েই রায়গঞ্জ বিধানসভা আসনটি প্রথম দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়ে কৃষ্ণর বক্তব্য, রায়গঞ্জ -বারসই সড়কের জন্য বাহিনের সেতুর কাজ ৯০ শতাংশ হয়ে গেছে। বিহার সরকার এন ও সি দিলেই কাজ শুরু হবে।
অন্যদিকে, রায়গঞ্জ বাসস্ট্যাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জমি পাওয়া গিয়েছে। জেলাশাসক ডি পি আর তৈরির জন্য টেন্ডার ডেকেছেন। আশাকরি শীঘ্রই সুখবর পাবো।”
পাশাপাশি কৃষি ভিত্তিক শিল্পের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে বিভিন্ন কৃষিজাত ফসল উৎপন্ন হয়। বেশ কিছু শিল্প আছে। আমাদের এখানে সোয়াবিন চাষ করার ব্যাপারে শিলিগুড়িতে শিল্পপতি সম্মেলনে আলোচনা করেছি। মুখ্যমন্ত্রী ডালখোলা থেকে কোচবিহার পর্যন্ত শিল্প করিডরের কথা ঘোষণা করেছেন। আশাকরি এই জেলায় শিল্পায়ন আমরা দেখব।