রায়গঞ্জ: রায়গঞ্জে সরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা স্পিনিং মিল বন্ধ হয়েছিল অনেক আগেই। তার পরেও টিকে ছিল সবেধন নীলমণি কুলিক দুগ্ধপ্রকল্প। এখন সেখানেও বাতি জ্বালানোর কেউ নেই। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে কুলিক দুগ্ধপ্রকল্প। একসময় রমরমিয়ে চলা এই প্রকল্পের ভবনে আর মানুষের আনাগোনা নেই। চারপাশে জঙ্গলাকীর্ণ পরিবেশ। ভবনটি ক্রমশ পরিত্যক্ত রূপ নিচ্ছে। অথচ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিছুদিন পরেই ২০২১-এর নভেম্বরে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে এই প্রকল্পটিকে পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী নিজে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এই প্রকল্পের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই আলোচনার প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও আজও প্রকল্পের তালা খোলেনি। সরকারি এই প্রকল্প বন্ধের সুযোগে রায়গঞ্জে ব্যবসা বাড়িয়েছে বেসরকারি দুগ্ধপ্রকল্প।
সরকারি উদ্যোগে কুলিক দুগ্ধপ্রকল্পটি চালু হয়েছিল ২০০৩ সালে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায়, জেলা প্রশাসনিক ভবনের কাছেই। দুই দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ এলাকার গোয়ালাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা দুধ এখানে প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত করে প্রতিদিন সকালবেলা ডিস্ট্রিবিউটারদের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করা হত। কুলিক ব্র্যান্ডের দুধ, ঘি ও পনিরের চাহিদা ছিল যথেষ্ট।
প্রকল্পটি শুরুতে লাভজনকভাবেই চলছিল। কিন্তু দুধ সরবরাহকারীদের ন্যায্য মূল্য না দেওয়ায় তারা ধীরে ধীরে দুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেন। উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি কর্মচারীদের বকেয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। শেষপর্যন্ত ২০২১ সালের গোড়ার দিকে প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়। একসময় এখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন কর্মী কাজ করতেন। পরবর্তীতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় কর্মীসংখ্যাও হ্রাস পায়। প্রকল্পের প্রাক্তন কর্মী গৌর সাহা বলেন, ‘চার বছর ধরে দুগ্ধপ্রকল্প খোলার অপেক্ষায় আছি। শুনেছিলাম পিপিপি মডেলে চালু হবে। কিন্তু তারপর আর কিছুই হয়নি।’
দুগ্ধপ্রকল্পের পাশেই সেলুন চালান পবন ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে প্রকল্প চত্বর পরিষ্কার করে নীল-সাদা রং করা হয়েছিল। ভেবেছিলাম আবার চালু হবে। কিন্তু হল আর কই! দুগ্ধপ্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমারও ব্যবসা মার খেয়েছে।’
কুলিক দুধের প্রাক্তন ডিস্ট্রিবিউটার রায়গঞ্জের খরমুজাঘাট রোডের বাসিন্দা সুব্রত সরকারের কথায়, ‘কর্মচারীদের গাফিলতির কারণেই এই লাভজনক প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেল। অথচ একসময় বেসরকারি প্যাকেটজাত দুধ কোম্পানিগুলিকে টেক্কা দিয়েছিল কুলিক।’
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় প্রকল্পটিকে পিপিপি মডেলে পুনরুজ্জীবিত করার কথা আলোচনা হলেও তা এত বছরেও বাস্তবায়িত হল না কেন, তার জবাব জেলায় কারও কাছেই নেই। উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি পম্পা পাল বলেন, ‘দুগ্ধপ্রকল্পটি বহুদিন ধরে বন্ধ। বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। চালু করা সম্ভব কি না তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে।’
জেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের এক আধিকারিক আবার বলছেন, ‘এই প্রকল্পটি যদি বাংলা ডেয়ারি প্রকল্পের আওতায় আনা যেত, তাহলে ভালোভাবে পরিচালনা করা যেত। বাংলা ডেয়ারি বর্তমানে লাভজনকভাবে চলছে।’
অন্যদিকে, রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর দাবি, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো প্রকল্পটি পিপিপি মডেলে চালুর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলাম। কেন আর এগোয়নি তা বলতে পারব না। খোঁজ নিতে হবে।’