বিশ্বজিৎ প্রামাণিক, কুমারগঞ্জ: প্রাণভয়ে ভিটে ছেড়ে পরিবার নিয়ে পাশের জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন। তবু আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। পুলিশে অভিযোগ জানানোর ৫০ ঘণ্টা পরেও গ্রামছাড়া আদিবাসী পরিবারকে ঘরে ফেরানোর কোনও উদ্যোগই দেখা যায়নি পুলিশের তরফে। ওই আদিবাসী পরিবারটির অভিযোগ, তারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশ আর যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি। যারা ওই আদিবাসী পরিবারের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে, তারা এখন বহালতবিয়তে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তালের বক্তব্য, ‘আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আক্রান্ত পরিবার যাতে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে, সেজন্য সবরকম চেষ্টা শুরু হয়েছে। একটু সময় লাগবে।’ কিন্তু কেন এত সময় লাগবে? তার উত্তর অবশ্য মেলেনি।
প্রসঙ্গত, কুমারগঞ্জ থানার একটি গ্রামে ‘ডাইন’ অপবাদে আক্রান্ত ওই পরিবার গত ২০ দিন ধরে বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছে। অভিযোগ দায়ের করার ৫০ ঘণ্টা পরেও ঘরে ফেরার ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা পায়নি বলে জানিয়েছে পরিবারটি। যদিও প্রশাসনের দাবি, দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করার কাজ চলছে। ডাইন যে শুধু কুসংস্কার, সেকথা গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছে প্রশাসন।
ঘটনার পেছনে কুসংস্কারের ছায়া স্পষ্ট। গ্রামের কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ার দায় এক প্রৌঢের উপর চাপিয়ে ‘ডাইন’ অপবাদ দেওয়া হয়। ওই প্রৌঢ়কে মারধর করে পরিবার সহ গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়। স্থানীয় থানায় এনিয়ে অভিযোগও জানানো হয়। সেই খবর উত্তরবঙ্গ সংবাদে প্রকাশের পরই কিছুটা নড়চড়ে বসে প্রশাসন।
এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি সৌগত দাস বলেন, ‘ডাইন অপবাদ কেবলমাত্র কুসংস্কার ও অজ্ঞতার ফসল। আমরা খুব শীঘ্রই ওই গ্রামে গিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালাব।’
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে তৎপর হয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। আক্রান্ত পরিবারকে নিরাপত্তা দিয়ে দ্রুত ঘরে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন কুমারগঞ্জের বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডল। একই আশ্বাস শোনা গিয়েছে তপনের বিধায়ক বুধরাই টুডুর মুখেও।