শিলিগুড়ি: একসময় মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের (Mahananda action plan) আওতায় বসানো হয়েছিল হিউমপাইপ (Hume pipe)। যদিও বর্তমানে নজরদারি না থাকায় এই হিউমপাইপের উপরে ধীরে ধীরে দখলদারি শুরু হয়ে গিয়েছে। মহানন্দার চর এলাকায় বসানো হিউমপাইম সংলগ্ন এক নম্বর ওয়ার্ডের বস্তির এলাকার বাসিন্দাদের একটা অংশই এই দখল শুরু করেছে বলে অভিযোগ। প্রথমে বাঁশের কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। এরপর সুযোগ বুঝে তার উপর বানানো হচ্ছে ঘর। কোথাও আবার ঘেরা দিয়ে বাগান তৈরি করে ফেলা হচ্ছে। দখলদারির প্রবণতা বাড়তে থাকায় আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। বাসিন্দাদের কথায়, হিউমপাইপের ওপর দিয়ে যেভাবে দখলদারি শুরু হয়েছে, তাতে এবারে নদীর চরও পুরোটা দখল হতে শুরু করবে।
ওয়ার্ড কাউন্সিলার সঞ্জয় পাঠক অবশ্য সমস্তটাই মানছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘হিউমপাইপ বরাবর গতবছর দেড়শো মিটার বাঁধ সেচ দপ্তর থেকে করা হয়েছিল। আরও সাড়ে চারশো মিটার বাকি ছিল। সেই অংশটাতেই এই দখলদারি চালানো হচ্ছে। স্থানীয়রাই নিজেদের বাড়ির অংশ বাড়িয়ে নিচ্ছে।’ যদিও এক্ষেত্রে ওয়ার্ড কমিটি কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলারের বক্তব্য, ‘আমি ওদের বলছি যে, প্রশাসন এসে সমস্তটা গুঁড়িয়ে দেবে। আমরা ওদের পাশে দাঁড়াব না।’ এদিকে, দখলদারি প্রসঙ্গে মহকুমা শাসক অবোধ সিংঘালের বক্তব্য, ‘বিষয়টা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাম আমলে মহানন্দা নদীকে পরিস্রুত করতে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের অংশ হিসেবে এক নম্বর ওয়ার্ডের মহানন্দা নদীর চর এলাকা বরাবর হিউমপাইপ বসানো হয়েছিল। যা ওয়ার্ডের দুর্গাস্থান, কুলিপাড়া, ধরমনগরের বাসিন্দাদের কাছে সীমারেখাও হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরপরে ধীরে ধীরে হিউমপাইপ দখলের প্রবণতা শুরু হয়। বর্তমানে সে প্রবণতা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। দুর্গাস্থানের পেছনে যেতেই নজরে পড়ল, পাইপের ওপর বাঁশের প্যান্ডেল করা হয়েছে। যদিও কী কারণে সেই প্যান্ডেল, সেটা কেউই বলতে পারল না। কিছুটা দূরে যাওয়ার পর দেখা গেল পাইপের ওপর টিনের নতুন ঘর তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিষয়টা নিয়ে এক মহিলাকে প্রশ্ন করতে এসে বললেন, ‘পেছনে ঘর রয়েছে। পরিবার বাড়ছে, তাই একটু জায়গার প্রয়োজন। সেকারণে এই ঘরটা তৈরি করা হল।’ আবার বেশ কিছু অংশে হিউমপাইপের ওপর এভাবেই পাকা করে বাগান করার নাম করে জায়গা ঘেরা দেওয়া হয়েছে। এনিয়ে এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করতেই তাঁর দাবি, ‘হিউমপাইপগুলো তো সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই একটু বাগান তৈরি করা।’ স্থানীয় বাসিন্দা হীরক দাস বলছিলেন, ‘হিউমপাইপ সংলগ্ন বাসিন্দাদের একটা অংশ ধীরে ধীরে হিউমপাইপের ওপরের জায়গাটাও দখল করে নিচ্ছে। প্রথমে বেড়া দিয়ে ঘেরা দেওয়া হচ্ছে তারপরে টিনের ঘর করে নেওয়া হচ্ছে।’ ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিজয় পাসোয়ান বলেন, ‘এলাকার এই অংশে দখলদারির উপর প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন। নইলে কিছুদিন পর হিউমপাইপের যেটুকু অংশ দেখা যাচ্ছে, সেটাও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’ ওয়ার্ড কাউন্সিলারের অবশ্য বক্তব্য, ‘প্রশাসনের উচিত এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া।’