রাজু সাহা, শামুকতলা: চা বাগানের জমি নিয়ে সরগরম শ্রীনাথপুর। কয়েক দশক ধরে সেই বাগানের জমিতে চাষ করে আসার পর অধিকার ছাড়তে নারাজ স্থানীয় চাষিরা। আবার জমি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বাগান কর্তৃপক্ষও। ইতিমধ্যেই জমিরক্ষা কমিটি গড়ে আন্দোলনে নেমেছেন সেইসব চাষিরা। এবার পালটা চা বাগান রক্ষা কমিটি গড়ে আন্দোলনে নামলেন ডুয়ার্সের শ্রীনাথপুর চা বাগানের শ্রমিকরা।
বুধবার চা শ্রমিকরা চা বাগান রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। তাঁরা দাবি করেন, বাসিন্দারা অবৈধভাবে চা বাগানের জমি দখল করে চাষাবাদ করছেন। ওই জমি চা বাগানের লিজ হোল্ড জমি। ওই জমি চা বাগানের এলাকা বৃদ্ধি এবং চা শ্রমিকদের আবাসন তৈরির জন্য প্রয়োজন। অবিলম্বে প্রশাসন এই অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক, সেই দাবি জানান তাঁরা।
এদিন চা বাগান বাঁচাও কমিটির কর্মসূচিতে শামিল হন চা শ্রমিক নেতা বিদ্যুৎ গুণ, বলাই সরকার, কেদার নেওয়ার, মাইলি ওরাওঁ প্রমুখ। শ্রীনাথপুর চা বাগানের শ্রমিক অমিত মঙ্গর বলেন, ‘ওদের জমি ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও সেই জমি থেকে উঠছেন না। চা বাগানের স্বার্থে আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলাম। প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। প্রশাসন ওই অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হব।’
চা বাগান কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি চাষাবাদের সেই জমি নিজেদের দখলে নিতে চায়। কর্তৃপক্ষ সেই চাষিদের জমি ছাড়তে বলেছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা জমি ছাড়তে নারাজ থাকায় ২৪ জন বাসিন্দার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাগানের জমি দখল করে চাষ করার অভিযোগ তুলে মামলা করে বাগান কর্তৃপক্ষ। এরপরেই বাসিন্দারা জমি রক্ষা কমিটি গড়ে আন্দোলনে নামেন।
সেই জমি রক্ষা কমিটির নেতা রঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা কোনও দখল করিনি। আমাদের পূর্বপুরুষরা বহুবছর ধরে ওই জমি চাষ করছেন। তাই ওই জমির উপর আমাদের অধিকার রয়েছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষ মিথ্যা মামলা দিয়ে ভয় দেখিয়ে চা বাগানের শ্রমিকদের লেলিয়ে দিচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে। আমরা চা বাগানের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নই।’
ওই জমি চাষ করেই অন্তত ৫০টি পরিবারের সংসার চলে। এই দাবি করে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে এপিডিআর। তাদের নেতৃত্বে আলিপুরদুয়ারে গিয়ে মিছিল করে জেলা শাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন ওই চাষিরা। এরপর বাগানের চা শ্রমিকরা জমি রক্ষা কমিটির পালটা চা বাগান বাঁচাও কমিটি গড়ে আন্দোলনে নামায় পরিস্থিতি আরও জটিল হল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।