শুভদীপ শর্মা, ক্রান্তি: নতুন করে শনিবার বিকেলের পর থেকে পাহাড়ে বা সমতলে তেমন ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তিস্তার জলস্তর কমতে শুরু করেছে। যার জেরে ক্রান্তি (Kranti) ব্লকের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে গত দু’দিনের প্রবল বর্ষণে ব্লকের কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে চ্যাংমারি, চাঁপাডাঙ্গা ও রাজাডাঙ্গায় সবজিচাষিদের মাথায় হাত। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। ঋণ, ধার করে জমিতে চারাগাছ রোপণ করেছিলেন চ্যাংমারির কৃষক সঞ্জিত সরকার। পুজোর আগেই জমির ফসল বিক্রিও শুরু হত। তবে সেটা আর হল কই। তঁার কথায়, ‘ভারী বৃষ্টি ও তিস্তার জল ঢুকে প্রচুর সবজি নষ্ট হয়েছে। এখনও অনেক নীচু জমিতে জল দাঁড়িয়ে।’ এই পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইতিমধ্যে কৃষি দপ্তরের বিশেষ দল গোটা এলাকার ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তৈরি করতে শুরু করেছে। মাল ব্লক কৃষি আধিকারিক তনুরুচি বর্মন বলেন, ‘কৃষি দপ্তর ও হর্টিকালচার দপ্তর যৌথভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখছে। যেসব সবজিখেতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে সেখানে পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়তে পারে। এসব প্রতিহত করতে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ প্রথমে প্রচণ্ড গরম। তারপর গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে ক্ষতির মুখে জেলার কৃষকরা। ক্রান্তি ব্লকের চ্যাংমারি, চাঁপাডাঙ্গা ও রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতে তিস্তা সংলগ্ন জমিতে ব্যাপক পরিমাণে সবজি চাষ হয়। পুজোর আগেই সেগুলো বাজারে বিক্রির জন্য যেত। তবে ভারী বৃষ্টিতে মুলো, সিম, লংকা, স্কোয়াশ, পটল, ধনেপাতা, লাউ, কুমড়ো সহ বিভিন্ন সবজিখেত জলের তলায় চলে গিয়েছে। কৃষি দপ্তরের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, চ্যাংমারিতে ৬০০০, চাঁপাডাঙ্গায় ৪০০ ও রাজাডাঙ্গায় ৮০০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে চ্যাংমারির আপালচাঁদ বস্তিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সব থেকে বেশি।
চাঁপাডাঙ্গায় বহু জমিতে আমন ধান ফলতে শুরু করেছিল। বৃষ্টিতে বেশ কিছু ধান গাছ জলের তলায়। স্থানীয় কৃষক মফিজর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টির জলের ভারে অনেক জায়গায় জলের মধ্যে ডুবে রয়েছে বহু ধান। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর। ২ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে।’ কয়েক কোটি টাকার ফসল ও সবজির ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান সেই চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন রায়। রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় ওরাওঁয়ের কথায়, ‘বহু কৃষক আমাদের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি আমাদের তরফেও কৃষি দপ্তরকে জানানো হয়েছে।’