Sunday, February 16, 2025
Homeউত্তরবঙ্গDurga Puja | রাতে সীমান্তের গেটে তালা, পুজো দেখে সন্ধ্যায় ফেরা

Durga Puja | রাতে সীমান্তের গেটে তালা, পুজো দেখে সন্ধ্যায় ফেরা

মানিকগঞ্জ: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো দোরগোড়ায়। প্রতি বছরের মতো এবারও শারদোৎসবে মেতে উঠেছে বাঙালি। কিন্তু বাংলায় থেকেও পুজোর আনন্দে মেতে উঠতে পারেন না কল্যাণ রায়, আরজু সরকাররা। কারণ, তাঁরা যে নিজভূমে পরবাসী। তাঁরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বসবাসকারী ভারতীয়। কল্যাণ আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘এলাকায় পুজোর আয়োজন করতে পারি না। ফলে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব থেকে আমরা বঞ্চিত। তবে পুজো দেখতে ওপারে যাই। চেষ্টা করি, সন্ধ্যার মধ্যে ঠাকুর দেখে ঘরে ফেরার। রাতে আলোর ঝলকানি, রাত জেগে ঠাকুর দেখা, কিছুই দেখার সৌভাগ্য হয় না।’ সন্ধ্যা হলেই সীমান্তের গেট পেরিয়ে ঘরে ফিরে যেতে হয় তাঁদের। ঠাকুর দেখে অনেক রাত হলে আত্মীয়স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে থাকা ছাড়া আর উপায় থাকে না।

জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে রয়েছে ভারতীয় গ্রাম ছিট সাকাতি। গ্রামটিতে ভারতীয় মোট জমির পরিমাণ ১৫৩ বিঘা। বাসিন্দাদের অধিকাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভুক্ত হলেও আর পাঁচটা বাঙালির মতো পুজোয় শামিল হতে চান তাঁরা। একইভাবে নগর বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ছয়টি গ্রাম রয়েছে কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে। এর মধ্যে একটি গ্রামে হিন্দুদের বসবাস। বিএসএফের অনুমতি নিয়ে বহির্জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। সারাবছরই সীমান্তের নিয়ম মেনে যাতায়াত করতে হয়।

ছিট সাকাতির বাসিন্দারা যান সাতকুড়ায় ঠাকুর দেখতে। আর বাঙালপাড়ার মানুষগুলো ঠাকুর দেখতে যান বেরুবাড়িতে। সীমান্ত এলাকার দুটি গ্রাম থেকে ওই এলাকাগুলির দূরত্ব তিন কিমির মতো। ছিট সাকাতির তরুণ বুলেট সরকার জানালেন, কাঁটাতারের ওই প্রান্তের পুজোয় চাঁদা তোলা থেকে পুজোর অন্যান্য কাজ, সবেতেই অংশগ্রহণ করেন তাঁরা। কিন্তু পুজোয় সবচেয়ে বেশি আনন্দ তো রাতে ঠাকুর দেখেই মেলে। কিন্তু সেই সময়টাই তো তাঁদের হাতে থাকে না।

ছিট সাকাতির আরজু সরকার বললেন, ‘প্রতি বছর পুজোর দিনগুলিতে বিকেলে ভাইবোনদের নিয়ে প্যান্ডেলে যাই। কিন্তু রাতের আলোর বাহার ও ভিড় দেখতে পারি না। কোনওমতে ঠাকুর দেখে, আরতি দেখে বাড়ি ফিরি। কারণ নির্দিষ্ট সময়ের আগে গেট পেরিয়ে যেতে হয়। নাহলে বিএসএফ গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। সেইসঙ্গে কৈফিয়তও দিতে হয়।’ ক্ষুব্ধ শরিফুল সরকার জানান, ভারতবাসী হয়েও পরবাসীর মতো থাকতে হয়। সন্ধ্যার পর পুজোমণ্ডপগুলিতে আলোর খেলা শুরু হয়। দেবী দর্শনে ভিড় জমে। পুজো উদ্যোক্তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অথচ সেসব কিছুই তাঁরা দেখতে পারেন না, জানালেন বাঙালপাড়ার বাসিন্দা দীপক রায়।

কেউ কেউ আবার রাতে ঠাকুর দেখার জন্য অন্য এলাকায় বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটান। স্থানীয় রেশমা খাতুন বলেন, ‘রাত আটটা বাজলেই সীমান্তের গেটে তালা পড়ে যায়। শুধু পুজোর দিনে নয়, রাতে মেলা বা কোনও অনুষ্ঠান থাকলেই আত্মীয়-বন্ধুর বাড়িতে থাকতে হয়।’ এভাবেই যেটুকু আনন্দ পাওয়া যায়, সেটাই সম্বল ওই কাঁটাতারের পারের মানুষগুলোর।

Sourav Roy
Sourav Royhttps://uttarbangasambad.com
Sourav Roy is a working Journalist since 2013. He already worked in many leading media houses in this few years. Sourav presently working in Uttarbanga Sambad as a Journalist & Sub Editor of Digital Desk from March 2019 in Siliguri, West Bengal.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img
[td_block_21 custom_title="LATEST POSTS"]

Most Popular