শুভঙ্কর চক্রবর্তী
পলাশের ঝরে পড়ার দুঃখ ভুলিয়েছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, অমলতাস। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই লাল, বেগুনি, হলুদ ফুলে ভরা। তার উপর হিমেল হাওয়ার শিরশিরানি। এসব দেখেশুনে মনে হতেই পারে উত্তরবঙ্গে এখনও বসন্তকাল চলছে। আসলে সবটাই ওই হাওয়ার খেলা। হাওয়া থেমে গেলেই গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে।
উত্তরবঙ্গের ভোটেও (Lok Sabha Election 2024) এবার অকাল বসন্ত। মনে হচ্ছিল, বোমা-গুলি, খুনজখমের ভোট হবে। কিন্তু প্রথম দুই দফাতেই শান্তির ঠান্ডা হাওয়া বয়ে গিয়েছে। রতুয়ার বোমাবাজি ছাড়া তৃতীয় দফায় মালদার ভোটকেও হিংসাত্মক বলা যাবে না। তাই বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে বসন্ত। কিন্তু গ্রীষ্মের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করার উপায় নেই।
একাধিক সমীকরণের উপর ঝুলছে উত্তরের আট কেন্দ্রের প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ। প্রতিটি কেন্দ্রের জ্যামিতি আলাদা। তবে আট কেন্দ্রেই কমন ফ্যাক্টর জাতপাত। মালদার দুই কেন্দ্র, রায়গঞ্জে ভোটে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবেন সংখ্যালঘুরা। বালুরঘাটেও সংখ্যালঘু ভোটাররাই জয়-পরাজয়ের কাঁটা। কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে রাজবংশীদের সমর্থন যে বাক্সে পড়বে তারাই বিজয় পতাকা ওড়াবে। আলিপুরদুয়ারে আবার আদিবাসী ভোটাররা ঠিক করে দেবেন জেলা থেকে কে যাবেন দিল্লিতে।
উত্তরবঙ্গজুড়ে ভোটে এবার সেই অর্থে সাধারণ মানুষের মধ্যে উন্মাদনা ছিল না। প্রচার, ফেস্টুন, ব্যানারও অন্যবারের তুলনায় অনেক কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভোটাররা নীরব। সাধারণ ব্যখ্যা এরকম যে, নীরব ভোট শাসকদলের বিরুদ্ধেই পড়ে। লোকসভার নিরিখে শাসক বিজেপি। আবার রাজ্যের নিরিখে তৃণমূল। নীরব ভোটাররা কোন শাসকের বিরুদ্ধে বোতামে চাপ দিয়েছেন তা বুঝতে নাজেহাল সব দলের নেতারা। বাইরে অনেকেই অনেক কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু কয়েকটি কেন্দ্রে জোর দিয়ে তৃণমূল, বিজেপি বা কংগ্রেস কোনও পক্ষই জয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
মালদা দক্ষিণ বাদে বাকি সাত কেন্দ্রেই মূল লড়াই বিজেপি (BJP) এবং তৃণমূলের (TMC)। কোচবিহারে (Cooch Behar) লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। ভোটের পর তৃণমূলের শরীরী ভাষা বিজেপির চাইতে চাঙ্গা বলেই মনে হচ্ছে। নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে উদয়ন গুহর হাতাহাতির মতো ঘটনা ছাড়া এবার নির্বাচনে বিজেপিকে লুজ বল দেয়নি তৃণমূল। বংশীবদনপন্থী গ্রেটারদের ভোট এই কেন্দ্রে তৃণমূলের বাড়তি পাওনা। অন্যদিকে যে নগেনের ভরসায় ময়দানে নেমেছিলেন নিশীথ তিনি বিজেপির হয়ে ভোট চাননি। নগেনপন্থী ভোটারদের একটা অংশ এবার ভোটই দেয়নি। ফলে চাপ বেড়েছে পদ্মের।
জন বারলার রহস্যজনক গতিবিধি আলিপুরদুয়ারে বিজেপির জন্য বাড়তি চিন্তার কারণ হয়েছে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হতেই পারে বারলা বোধহয় বিজেপির ধস নামিয়ে দেবেন। তবে তাঁর জল ঘোলা করে মাছ ধরতে যাওয়ার চেষ্টা পুরোপুরি সফল হবে না, সেটা ভোটের লাইনের কথাবার্তাতেও খানিকটা স্পষ্ট। আবার ভোট দিয়ে এসে বহু ভোটারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রতি সওয়াল হাসি চওড়া করেছে তৃণমূলের। তবে মনোজ টিগ্গার ব্যক্তিগত ক্যারিশমা এবং তৃণমূলের গোষ্ঠী রাজনীতি ভয় বাড়াচ্ছে প্রকাশ চিকবড়াইকের।
জলপাইগুড়িতে (Jalpaiguri) ভোটারদের মেজাজ কিন্তু তৃণমূলের ভয়ের কারণ। দলের গোষ্ঠীকোন্দল এবং অপছন্দের প্রার্থী যে তাদের ডোবাতে পারে সেই বিষয়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছে দলের ভেতরেই। বিজেপিকে পছন্দ করে ভোট দেওয়ার বদলে তৃণমূলকে অপছন্দ করে যে ভোট পড়েছে এলাকায় এলাকায় তা ভোটের দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে চায়ের রাজ্যে ডাক্তারবাবু খোশমেজাজেই আছেন।
গোর্খ্যাল্যান্ডের ইস্যুর অনেকটাই বাইরে এসে এবারে দার্জিলিংয়ের ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। ভোটারদের প্রবণতা বলছে, যতটা মনে করা হচ্ছিল ততটা প্রভাব ফেলতে পারবেন না বিক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। বাম, কংগ্রেস, হামরো পার্টির জোট ভালোই ভোট কাটবে। পাহাড়ের পাদদেশে অনীতরাই ভোট বাড়িয়ে দেবেন তৃণমূলের। তবে তাতেও পাহাড়ে পদ্মকে ছুঁতে পারবে না ঘাসফুল।
রায়গঞ্জের (Raiganj) হিসেব খুব একটা জটিল নয়। বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী এই কেন্দ্রে জিতবেন না, সেকথা ভোটের দিন ভোটারের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে। তবে তারপরও ভোটারদের একটা অংশ ভিক্টরের দিকেই ঝুঁকে ছিল। ভোটের পর খানিকটা হতাশ দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতাদেরও। প্রার্থী নির্বাচন ঠিক হয়নি বলেও ভোট শেষে দলীয় তাঁবুতে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায় রায়গঞ্জে খুশি পদ্ম শিবির।
বালুরঘাটে (Balurghat) ভোটারদের বুথ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুই পক্ষই একে অপরকে টেক্কা দিতে চেষ্টা করেছে। বালুরঘাটের সংখ্যালঘু ভোটাররা বিপ্লব মিত্রকে খুব একটা হতাশ করবেন না সেটা বলাই যায়। হিন্দু ও আদিবাসী ভোটও মোটামুটিভাবে পদ্মপাতায় হেলে পড়েছে। সেন্টিমেন্টের ভোটে বালুরঘাট সুকান্তকে এবং গঙ্গারামপুর বিপ্লব মিত্রকে এগিয়ে রেখেছে। ফলে জল কোনদিকে গড়াবে তা বোঝা শক্ত।
মালদা উত্তরে তৃণমূলের পরিকল্পনা যে এলোমেলো হয়েছে তা বিকেল থেকেই স্পষ্ট হচ্ছিল। তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণেই তা ধরা পড়েছে। যে ছকে খগেন মুর্মু ভোটের খেলা পরিচালনা করেছেন ধরতেই পারেননি দুঁদে পুলিশকর্তা। শেষবেলায় সংখ্যালঘু ভোটারদের কথাবার্তা বলছে কংগ্রেস ওই কেন্দ্রে চাহিদার চাইতে বেশিই ভোট পেতে পারে। ফলে কাটাকাটির হিসেবে সময়ের আগেই গেরুয়া হতে পারে ফজলির রং। ভোটের আগের রাতের খেলায় মালদা দক্ষিণে অনেক হিসেবই এদিক ওদিক হয়েছে। তৃণমূলপন্থী সংখ্যালঘুদের একাংশের ভোট যে কংগ্রেসের বাক্সে পড়েছে তা এদিন গোপন রাখেননি অনেক নেতাই। আবার তৃণমূলের হিন্দু ভোটের খানিকটা বিজেপিতে না যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে হিন্দু ভোট একজোট হওয়ায় চিন্তায় রয়েছেন ইশা খান। তবে গনি ইমেজই ভরসা জোগাচ্ছে তাঁকে।
কিশনগঞ্জঃ নির্বাচনের মাঝেই ফের লক্ষ লক্ষ দেশি-বিদেশি টাকা উদ্ধার করল বিহার পুলিশ। রবিবার এই বিপুল…
কোচবিহার: এবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও সাফল্যের চিহ্ন রাখল কোচবিহার। শনিবার বিশ্বসেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ…
বেলাকোবাঃ রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের কাজের অভিযোগে সরব হলেন গ্রামবাসীরা। ঘটনাটি জলপাইগুড়ির সদর ব্লকের বেলাকোবা গ্রাম…
রায়গঞ্জ: অবশেষে ধরা পড়ল ত্রিপুরার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী দুর্গাপ্রসন্ন দেব খুনের মূল পাণ্ডা রাকেশ বর্মন (৩৩)।…
রায়গঞ্জঃ এক তরুণীকে অপহরণ করে অন্যত্র লুকিয়ে রাখার অভিযোগে মূল অভিযুক্তের কাকাকে গ্রেপ্তার করল রায়গঞ্জ…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছিলেন স্বামী। সেই মেসেজ খুলতেই স্ত্রী শুনতে পেলেন…
This website uses cookies.