শুভঙ্কর চক্রবর্তী, মুর্শিদাবাদ: তাপমাত্রা তখন ৪১ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। গাছতলায় খালি গায়ে লুডো খেলছিলেন কয়েকজন। অন্য সময় লোক থিকথিক করে। আজ দোকানগুলোয় মাছি মারার লোক নেই। এই মতিঝিল যেন অচেনা। নিজের দোকানের সামনে ছাতা মাথায় বিরিয়ানি বিরিয়ানি বলে হাঁক পাড়ছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের এক তরুণ। ছাতা লেগে দোকানের চালায় লাগানো তৃণমূলের পতাকা খুলে যাওয়ায় দৌড়ে ভেতর থেকে এলেন তাঁর মা। তাড়াতাড়ি পতাকা রাস্তা থেকে তুলে ধমক দিলেন, ‘তুই ভেতরে যা। পতাকা খুলে ফেললি। কী জানি কী হয় এবার।’ গজরাতে গজরাতে ছেলে বললেন, ‘এবার আর ওরা কিছু করতে পারবে না।’
এমন সময় নজর গেল গাড়ি পার্কিংয়ের দিকে। পুলিশের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে একজন বলছেন, ‘এটা পাবলিক প্রপার্টি৷ এখানে গাড়ি ঢোকালে টাকা দিতেই হবে। পুলিশের ভয় আর চলবে না।’ নবাবের জেলা মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) এই দুই ঘটনা বিদ্রোহের ইঙ্গিত দিল।
এত গরমেও হাজারদুয়ারির (Hazarduari) সামনে চায়ের দোকানে ভিড়। সেখানে চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিল ভগবানগোলার আখেরুল আলির সঙ্গে। ভোটের (Lok Sabha Election 2024) কথায় কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বললেন, ‘হাওয়া ভালো নয়।’ সঙ্গে সঙ্গে একপ্রকার খেঁকিয়ে উঠলেন দোকানদার মহিলা, ‘কী করে ভালো থাকবে। এত গোলাগুলি, বোমাবাজি করলে কী হয়! পঞ্চায়েত ভোটে কী না করল। ভোটটাই দিতে দিল না। বলল ভোট দিলে বোমা মারবে। এবার চান্স পেলে উচিত শিক্ষা দেবে লোকে।’
পঞ্চায়েতে ভোট দিতে না পারায় এই ক্ষোভ পৌঁছেছে তৃণমূল নেতাদের কানে। তাই এখন ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা। সাগরপাড়ার চায়ের দোকানের বারান্দায় তৃণমূল নেতার সঙ্গে স্থানীয় একজনের কথোপকথনে সেটা স্পষ্ট হচ্ছিল। দোকানের ভেতর থেকে কানে এল তৃণমূল নেতার কথা, ‘পঞ্চায়েতের কথা বাদ দাও। ওসব এখন মনে রাখলে চলবে না। ওঁদের হয়ে ক্ষমা চাইছি। ভোটটা যাক, ওঁদের ডেকে সব মিটিয়ে দেব।’
ভগবানগোলা, রানিনগর, মুর্শিদাবাদ, হরিহরপাড়া, ডোমকল, জলঙ্গি এবং করিমপুর- এই সাত বিধানসভা নিয়ে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে একমাত্র মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। বাকি ছয় আসনে তৃণমূল। তবুও চাপ বাড়ছে জোড়াফুলে।
এই কেন্দ্রে মূল লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের। বিজেপি তৃতীয় দল। বিজেপি প্রার্থী করেছে মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরীশংকর ঘোষকে। গতবার বিজেপি ছিলেন এখনকার তৃণমূল নেতা হুমায়ন কবীর। ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় তিনি কিছু ভোট টেনেছিলেন। সেই তুলনায় এবারের বিজেপি প্রার্থী লো প্রোফাইল। ফলে হুমায়ুনের গতবারের পাওয়া ভোটের কিছুটা এবার জোটের দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। জয়ের জন্য নয়, এবার প্রভাব বিস্তারের লড়াই বিজেপির।
সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে জোড়াফুল ছেয়ে আছে মুর্শিদাবাদে। যদিও দলের প্রার্থী আবু তাহেরের লড়াই কাঁটামুক্ত নয়। দলের গোষ্ঠীকোন্দল তাঁকে ভাবাচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা দুই ভাগে বিভক্ত। বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গিপুর। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় গোটাটাই বহরমপুর সাংগঠনিক জেলায়। গোষ্ঠীকোন্দল সেখানেই বেশি। আবু তাহের দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় তাঁর বিরোধী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দেওয়ায় চিন্তা বাড়িয়েছে জোড়াফুল শিবিরের।
মুর্শিদাবাদকে ভর করে সর্বহারার তকমা ঘোচাতে ‘হাত’ ধরেছে কাস্তে-হাতুড়ি-তারা। ঘাসফুলের বাগানে চাষ করতে খোদ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকেই মাঠে নামিয়েছে লাল পার্টি। মুর্শিদাবাদের জ্যামিতি খুব জটিল নয়। কংগ্রেসের পুরো অংশের ভোট সিপিএমের প্রতীকে পড়লে বেকায়দায় পড়তে পারে তৃণমূল। ২০১৯ সালে আবু তাহের পেয়েছিলেন ৪১.৫৭ শতাংশ ভোট। সে বছর কংগ্রেস, সিপিএম আলাদাভাবে লড়েছিল। কংগ্রেস প্রার্থী আবু হেনা পেয়েছিলেন ২৬ শতাংশ, সিপিএম প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান ১২.৪৪ শতাংশ ভোট। দু’দলের প্রাপ্ত ভোট একসঙ্গে করলে ৩৮.৪৪ শতাংশ, তৃণমূলের থেকে মাত্র ৩.১৩ শতাংশ কম।
যে সিপিএমের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর লড়াই করেছেন, তাদের কি আদৌ ভোট দেবেন কংগ্রেস কর্মীরা? এটাই এখন মুর্শিদাবাদে লাখ টাকার প্রশ্ন। এর আগেও সমঝোতা সত্ত্বেও কংগ্রেসের ভোট পুরোটা বামেদের বাক্সে পড়েনি। তাহলে সব জেনেও কেনও রিস্ক নিলেন সেলিম?
জোট করে যে তৃণমূলকে হারানো সম্ভব, প্রমাণ করেছে সাগরদিঘি। সেটাই কংগ্রেসের উপর ভরসা বাড়িয়েছে সিপিএমের। দুই দলের পুরো ভোট এক বাক্সে ফেলাই এখন চ্যালেঞ্জ অধীর, সেলিমদের কাছে। গ্রামগঞ্জে তিক্ততা ভুলে অনেকটা কাছাকাছি আসতে পেরেছে হাত-হাতুড়ি। সেলিম প্রার্থী হওয়ায় বসে যাওয়া বাম কর্মীরা চাঙ্গা হয়েছেন। প্রচারের কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভের হাওয়া বিজেপিতে না গিয়ে জোটের দিকে ঘুরেছে। তাতে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন সেলিম। তবে ‘হাত’ যদি শক্ত করে কাস্তে ধরে, তাহলেই শুধু ঝটকা দিতে পারে মুর্শিদাবাদ।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ‘পাকিস্তানের কাছে আগে বোমা ছিল, এখন ভিক্ষের বাটি’, এমনই মন্তব্য করলেন…
বুনিয়াদপুর: ধান ভাঙার মিলঘরে ১৩ বছরের আদিবাসী কিশোরীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে (Harassment Case) পঞ্চাশোর্ধ্ব মিল মালিককে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বিদেশি পড়ুয়ারা (Foreign students) হামলার শিকার হচ্ছেন কিরঘিজস্তানে (Kyrgyzstan)। হামলাকারীদের মূল…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ১৩৭ জন যাত্রীকে নিয়ে জরুরি অবতরণ করল এয়ার…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: প্রবল বর্ষণের জেরে বন্যায় আফগানিস্তানে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ…
মানিকচক: খোলা হাটে চড়া দামে দেদারে বিক্রি হচ্ছে সরকারি সিলমোহর লাগানো ত্রিপল। একটি দুটি নয়…
This website uses cookies.