রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) রীতিমতো উত্তরবঙ্গের মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন। বারবার এসেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক জনসভা, কর্মীসভা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) শীর্ষ নেতৃত্ব। মনে করা হচ্ছিল, এবার উত্তরের পদ্ম বাগানে ফুটবে জোড়াফুল। আত্মবিশ্বাসী ছিলেন জেলার নেতারাও। তবে ফল (Lok sabha election result 2024) ঘোষণার পর দেখা যায়, একমাত্র কোচবিহার বাদে উত্তরের প্রতিটা আসনে গেরুয়া দুর্গ অটুট।
তাই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গে বিশেষ নজর দিতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। এখানকার হেরে যাওয়ার আসনগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে শিলিগুড়ি শহর এবং সমতল এলাকায় ভোটের ফলাফল নিয়ে চিন্তিত দলনেত্রী আলাদাভাবে রিপোর্ট চেয়েছেন। শহরে ওয়ার্ড ধরে ধরে এবং মহকুমা এলাকায় বুথ ধরে ধরে ভোটের রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। কোন এলাকায় কত ভোটে পিছিয়ে দল, কেন পিছিয়ে সহ একাধিক প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে সেখানে। সূত্রের খবর, পৃথকভাবে আইপ্যাককে উত্তরবঙ্গ এবং শিলিগুড়ির (Siliguri) জন্য রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্টও যাবে দলনেত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
শিলিগুড়িতে পুরনিগম এবং মহকুমা পরিষদ তৃণমূলের দখলে থাকলেও কেন লোকসভা এবং বিধানসভায় দলকে পেছনে সারিতে থাকতে হচ্ছে, তা নিয়ে শনিবার কালীঘাটের বৈঠকে চর্চা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাসকদলের এক নেতার কথায়, ‘দিদি এবার নিজে নজর দিতে চাইছেন। তাই সমস্ত রিপোর্ট তঁার কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।’ জেলার ওই নেতা শনিবার কালীঘাটের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার বাদ দিয়ে উত্তরের সব আসন থেকে একরাশ হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়েছে তৃণমূলকে। অভিযোগ ছিল, একাধিক লবির জন্যই কোচবিহারে জিততে পারছিল না তৃণমূল। কিন্তু এবারের লোকসভায় সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বার্তায় কোচবিহারের সমস্ত লবি এক ছাতার তলায় এসে কাজ করেছে। যার ফল হাতেনাতে পেয়েছে দল। কোচবিহারে হাইপ্রোফাইল বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে হারাতে পারলেও শিলিগুড়িতে কেন বারবার ব্যাকফুটে যেতে হচ্ছে তৃণমূলকে, সে ব্যাপারে বিস্তর কাটাছেঁড়া হয়েছে দলের অন্দরে।
শিলিগুড়িতে জেলা সভানেত্রী এবং শহরের নেতাদের যে দুটি পৃথক লবি সক্রিয়, সেই আভাস পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। নির্বাচনের আগে জেলা সভানেত্রী মাত্র ২০ দিন শহরে প্রচার করেছেন, সেই খবর পৌঁছেছে কালীঘাটে। কেন তিনি আগে প্রচারে যাননি শহরে, মমতা জেনেছেন তার কারণও।
অন্যদিকে, শহরের নেতাদের মধ্যে গৌতম দেব সহ এক-দুজন ছাড়া বাকিরা যে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না, সেটা অজানা নেই মমতার। তাই খোঁজখবর নিতে আস্থাভাজন ফিরহাদ হাকিমকে উত্তরে পাঠিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি নিজে রিপোর্ট চেয়েছেন। জেলা সভাপতিদের থেকে পাওয়া রিপোর্ট এবং ফিরহাদ হাকিমের থেকে নেওয়া রিপোর্ট নিয়ে তিনি পর্যালোচনা করবেন বলে জানা গিয়েছে।
নির্বাচনের আগে জলপাইগুড়ি জেলায় দীর্ঘদিন ছিলেন তিনি। ঝড়ের রাতেই কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে এসে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দঁাড়িয়েছিলেন। অথচ সেখানেও প্রায় ৮৬ হাজার ভোটে বিজেপির থেকে পিছিয়ে তৃণমূল। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে তফাতটা ৭২ হাজারেরও বেশি। এরমধ্যে শুধুমাত্র শিলিগুড়ি শহরের ১৪টি ওয়ার্ডে ৪৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে শাসকদল। মেয়র গৌতম দেবের গড় বলে পরিচিত ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে ব্যাকফুটে থাকাটাও চর্চায় রয়েছে। সূত্রের খবর, এবার শিলিগুড়ির রাশ নিজের হাতে নিতে চাইছেন দলনেত্রী।