শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : বছর দেড়েক আগে তৎকালীন পুরনিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান গৌতম দেব সহ প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন সরকারের উপস্থিতিতে ধুমধাম করে জংশন এলাকায় উদ্বোধন করা হয়েছিল মা ক্যান্টিন-এর। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা প্রকল্পের এই ক্যান্টিন দখল নিল স্থানীয় শাসকদলের নেতারা। মোটা টাকার বিনিময়ে দোকান ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। এলাকায় তাঁরা সিন্ডিকেট চালান বলেও অভিযোগ। ইতিমধ্যেই সুজিত রায় ও কানাইয়া মাহাতো নামে দুজন স্থানীয় নেতাকে পুরনিগমের তরফে স্টলটি খালি করে দেওয়ার নোটিশ ধরানো হয়েছে।
বিষয়টা নিয়ে শাসকদল অস্বস্তিতে পড়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলার রামভজন মাহাতোর বক্তব্য, এটায় রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই। সরকারি জায়গা দখল করা হয়েছে। পুরনিগম নোটিশ দিয়েছে। ক্যান্টিনের ওই জায়গাটা পুনরুদ্ধার করা হবে। দলীয় প্রসঙ্গ তুলতে অস্বস্তিতে পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার। তাঁর বক্তব্য, যে দখল করুক। সরকারি জায়গা এভাবে দখল করতে দেওয়া যাবে না। নোটিশে কাজ না হলে আমরা নিজেরা গিয়ে ওই জায়গা পুনরুদ্ধার করব। হঠাৎ মা ক্যান্টিনের স্টল দখল কেন, অভিযুক্ত সুজিতের বক্তব্য, আগে ওই জায়গাটা আমারই ছিল। মা ক্যান্টিন হবে বলে জায়গাটা ছেড়েছিলাম। যে মা ক্যান্টিনের দায়িত্ব পেয়েছিল সে টাকা না পাওয়ায় ছেড়ে দেয়। তাই আমি আবার ভাড়া দিয়েছিলাম। এখন আবার জায়গাটা মা ক্যান্টিনের জন্য ছেড়ে দেব।
বিষয়টি নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে টিপ্পনী কাটছেন পুরনিগমের বিরোধী দলনেতা বিজেপির অমিত জৈন। তাঁর বক্তব্য, শহরজুড়ে এখন সিন্ডিকেটরাজ চলছে। এসবের মধ্যে মা-ও যে বাদ যাবে না। সেটাই স্বাভাবিক। তাই মা ক্যান্টিন-ও দখল হয়ে গেল। সরব হয়েছেন সিপিএম কাউন্সিলার শরদিন্দু চক্রবর্তী । তিনি বলেন, এটাই তো গোটা রাজ্যের কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরনিগমের উচিত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া। নইলে আমরা রাস্তায় নামব। তৃণমূলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান অলোক চক্রবর্তীর বক্তব্য, পুরনিগম যখন হস্তক্ষেপ করেছে, তখন অবশ্যই সুরাহা হবে। মা ক্যান্টিন গরিব মানুষের অধিকার। ওটা খর্ব করার অধিকার কারও নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জংশন এলাকার সুলভ শৌচালয়ের পেছনে থাকা জায়গাটাকেই মা ক্যান্টিন হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুরনিগমের তরফে নিয়ে আসা হয় টিনের শেড। বড় আকারে উদ্বোধন করা হয় মা ক্যান্টিন স্টলের। এলাকায় আসা পর্যটক, সারাদিন কাজ করা শ্রমিক, গাড়িচালকদের কথা মাথায় রেখে ওই মা ক্যান্টিন চালু করা হয়েছিল। কাজের সূত্রে সারাদিন ওই এলাকাতেই থাকেন সুরিন্দর শর্মা। তিনি বলেন, কিছুদিন ভালো চলল। তারপর হঠাৎ করে সব বন্ধ হয়ে গেল। তারপরই দেখলাম ওই ক্যান্টিনের স্টলটা দোকান ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন দোকান মালিককে প্রশ্ন করা হয়, এটা তো মা ক্যান্টিন ছিল। হঠাৎ করে আপনার দোকান হয়ে গেল কীভাবে? দোকানদারের সংক্ষিপ্ত উত্তর, দাদারা জানে। শহরবাসী ইন্দ্রনাথ দের কথায়, শহরে চোখের সামনেই অবৈধ মার্কেট কমপ্লেক্স, দোকানপাট হচ্ছে। এবারে মা ক্যান্টিনটাও দখল হয়ে গেল।