মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, বীরপাড়া: উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই আবার যেন ‘জীবিত’ হয়ে উঠেছেন তারকেশ্বর লোহার। শনিবার রাতে নাম ঘোষণার পর সবার নজরে এখন পদ্মফুল প্রতীকে লড়তে যাওয়া রাহুল লোহার, আর যে কোনও আড্ডায় ঘুরেফিরে আসছে রাহুলের পিতৃপরিচয়।
মাদারিহাটে বিজেপি প্রার্থী রাহুলের বাবা তারকেশ্বর লোহার বাম আমলে ছিলেন ফালাকাটার দলগাঁও চা বাগানের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিটু নেতা। প্রয়াত বিতর্কিত সিটু নেতা তারকেশ্বরকে টেনেই রাহুলের বিরুদ্ধে মাদারিহাটে উপনির্বাচনে প্রচার করবে তৃণমূল। রবিবার সাফ জানান দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিকবড়াইক। তারকেশ্বর প্রয়াত হন ২০১৭ সালে। প্রকাশ জানিয়ে দিলেও বিরোধী দলের প্রার্থীর প্রয়াত পিতার রাজনৈতিক জীবনের সমালোচনা করে ভোটে প্রচার করা ঠিক হবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে তৃণমূলের ব্লক স্তরে। এমনকি তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পোও এখনই এনিয়ে মন্তব্যে নারাজ।
প্রকাশ আলিপুরদুয়ারে বলেন, ‘বিজেপির মাননীয় প্রার্থীর বাবা সিপিএম নেতা ছিলেন। চা শ্রমিকদের অত্যাচার, শোষণ করতেন। তাঁর ওপর ক্ষোভেই শ্রমিকরা ১৯ জনকে পুড়িয়ে মেরেছিল। প্রচারে সবই তুলে ধরা হবে।’
শনিবার রাহুলকে প্রার্থী করার পরই তারকেশ্বর প্রসঙ্গ শোনা যায় অনেকের মুখেই। এনিয়ে স্যোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্যও করেন কেউ কেউ। বিশেষ করে এনিয়ে বেশি উৎসাহী তৃণমূলের কট্টর কর্মীরা। আর জয়প্রকাশকে প্রার্থী করার পরই রবিবার তারকেশ্বর প্রসঙ্গ টেনে রাহুলের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তৃণমূলের জেলা সভাপতি প্রকাশ। এদিকে, শনিবার রাত থেকেই দলগাঁও কাণ্ডের ইতিহাস ইন্টারনেট ঘেঁটে বের করে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে নেমে পড়েছে তৃণমূলের স্যোশ্যাল মিডিয়া সেল। বের করা হয়েছে পুরোনো ঘটনার খবরের কাগজের কাটিং। হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল ওই খবরের কাটিং পৌঁছে যাচ্ছে বিজেপি কর্মীদের কাছেও। মনোজ-ঘনিষ্ঠ বিজেপির বীরপাড়ার এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘ইয়ে লোগ গাড়ে হুয়ে মূর্দেকো উখাড় রাহা হ্যায়।’ অর্থাৎ, এরা তো কবরে চলে যাওয়া লাশকেও বের করে আনছে।
২০০৩ সালে দলগাঁও চা বাগানে কর্মী নিয়োগের ঘটনায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তারকেশ্বরের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। তারকেশ্বর প্রাণে বাঁচলেও জীবন্ত দগ্ধ হন ১৯ জন। ভিটেছাড়া হতে হয় লোহার পরিবারকে। এরপর থেকে বীরপাড়া থানার শিশুঝুমরায় রয়েছে পরিবারটি। রাহুলও প্রথমে এসএফআই এবং পরে সিপিএম করতেন। ২০১৬ সালে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। তিনি প্রার্থী হওয়ার পর তাঁর প্রয়াত বাবার সময়কার ঘটনা নিয়ে ফের চর্চা শুরু হওয়ায় অসন্তুষ্ট রাহুলও। অস্বস্তিতে বিজেপির জেলা সভাপতি তথা সাংসদ মনোজ টিগ্গাও। আলিপুরদুয়ারের সাংসদ বলছেন, ‘এটা দু’দশক আগের ঘটনা। তবে তারকেশ্বর কাউকে খুন করেননি। কেবল ভোটের জন্য কারও প্রয়াত বাবাকে টেনে আনা উচিত নয়।’
তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশের ঘনিষ্ঠ এক ব্লক নেতা বলছেন, ‘প্রচারে দলগাঁও কাণ্ডের ইতিহাস প্রচারে টানা হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। কারণ বিষয়টি বুমেরাংও হতে পারে।’
তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশও একসময় সিপিএম কর্মী ছিলেন। দলগাঁও চা বাগানে ওই ঘটনার সময় ডিমডিমা চা বাগানে সিপিএমেরই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন জয়প্রকাশ।

