শিলিগুড়িঃ ঘড়িতে তখন রাত নয়টা। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ এয়ারভিউ মোড় সংলগ্ন মহানন্দা নদীতে শ’য়ে শ’য়ে মানুষের ঢল। কারও হাতে পলিব্যাগ তো কারও হাতে জার। সকলেই নদীর কালো ঘোলা জলে কিছু একটা খুঁজছিলেন। কেউ কেউ আবার নদীর জলে টর্চ মেরে দেখার চেষ্টা করছেন। ঠিক কী হয়েছে জানতে কাছে যেতেই দেখা গেল প্রত্যেকের থলেতেই রয়েছে মাছ। হঠাৎ নাকি নদীতে শ’য়ে শ’য়ে মরা মাছ ভেসে উঠেছে। সেই মাছ সংগ্রহ করতেই নদীতে রীতিমতো প্রতিযোগীতা চলছিল। কে কার আগে বেশি মাছ ধরবে তা নিয়ে হইহই পরে গিয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ একবার এসেছিল বটে, কিন্তু দূর থেকে দেখে পুলিশও ফিরে যায়। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন এই মাছ খেলে বিপদ হতে পারে। কী কারণে মাছগুলির মৃত্যু হল তা আগে জানতে হবে।
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক কৌশিক সরকারের বক্তব্য, ‘হঠাৎ কেন মাছগুলি মরে গেল সেটা জানা প্রয়োজন। এভাবে মরা মাছ খেলে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে।’ শিলিগুড়ির ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকারের বক্তব্য, ‘বুধবার সকালেই পুরনিগমের পরিবেশ বিভাগের দল ঘটনাস্থলে যাবে। রাতেও আমরা খোঁজখবর করছি।’
মহানন্দায় এর আগেও একাধিকবার মরা মাছ ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছে। বিশেষ করে গরমের সময়েই এই সমস্যা বেশি দেখা গিয়েছে। শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন নিকাশির জল সরাসরি এসে মহানন্দায় মিলিত হয়। গরমের সময় মহানন্দার জল অনেকটাই শুকিয়ে যায়। ওই সময় নিকাশির জল এসে মিশলে দূষণের মাত্রাও বেড়ে যায়। এর জেরে জলে বায়োলজিকাল অক্সিজেন ডিমান্ডের (বিওডি) ভারসাম্যে তারতম্য হতে শুরু করে। এরফলে মাছ সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী এবং কীটের মৃত্যু হয়। এবারও সেরকমই কিছু হয়েছে কিনা সেই বিষয়টি তদন্ত করে দেখার দাবি উঠেছে। কারণ যখন মরা মাছ ভেসে উঠেছে তখন নদীর জল কালো এবং ঘোলাটে ছিল। আবার কেউ মাছ মারার জন্যে রাসায়নিক ব্যবহার করেছে কি না সেই বিষয়টিও দেখা উচিত বলে মনে করছেন পরিবেশ প্রেমীরা। তাই মরা মাছ না খাওয়ার আবেদন করেছেন তাঁরা।
পাশাপাশি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রচার করারও দাবি জানানো হয়েছে। ‘মহানন্দা বাঁচাও কমিটি’র পক্ষে জ্যোৎস্না আগরওয়ালের বক্তব্য, ‘রাজ্যের দূষিত নদীগুলির তালিকায় মহানন্দা রয়েছে। সব নিকাশির জল এখানে এসে মেলে। তাই মাঝে মাঝেই দূষণের মাত্রা বেড়ে যায় এবং মরা মাছ ভেসে ওঠে।’ পরিবেশ প্রেমী অনিমেষ বসুর বক্তব্য, ‘মহানন্দায় এমনিতেই দূষণ রয়েছে। এই দূষণে মরা মাছগুলি খেলে মানুষের অনেক রোগ ব্যাধি হতে পারে। অবিলম্বে ঘটনার তদন্ত করে দেখা উচিত। মহানন্দাকে বাঁচাতে কারও কোনও উদ্যোগ নেই। তাই আজ এই পরিনতি।’