শিবশংকর সূত্রধর
পড়ুয়াদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মোটিভেশনাল স্পিকার মৃণাল চক্রবর্তীর অনুপ্রেরণাদায়ক কথা, পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগীতানুষ্ঠানে জমজমাট হয়ে উঠল কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ হাইস্কুলের শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার ছিল বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষদিন। সকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীদের ভিড় জমতে শুরু করে রবীন্দ্র ভবনে। দিনভর অনুষ্ঠান চলার পর রাতেও সংগীতানুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
শতবর্ষ প্রাচীন বিদ্যালয়ের একশো বছর উদযাপনের উৎসব শুরু হয় এক বছর আগে। স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, মশাল মিছিল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজকর্মের পাশাপাশি নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার মৃণাল চক্রবর্তীর সেমিনারের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মূলপর্ব শুরু হয়। তার আগে ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশিত সমবেত সংগীত মুগ্ধ করে অতিথিদের। দুটি ধাপে মৃণালবাবুর সেমিনার সম্পন্ন হয়েছে।
প্রথম ধাপে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অনুপ্রেরণামূলক আলোচনা করেন তিনি। দ্বিতীয় ধাপে পড়ুয়ারা নিজেদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে সেখানে। কীভাবে নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকা যায়, কীভাবে ধৈর্য এবং পড়াশোনায় মনঃসংযোগ বাড়ানো যায় ইত্যাদি প্রশ্ন করে পড়ুয়ারা। ষষ্ঠ শ্রেণির জয় পণ্ডিত পরে বলেছে, ‘স্যরের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম কীভাবে পঠনপাঠনে মনঃসংযোগ বাড়ানো যায়। তিনি বিছানার বদলে চেয়ারে বসে পড়াশোনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। মেরুদণ্ড না বেঁকিয়ে, একদম সোজা বসে পড়তে বলেছেন আমাদের।’ প্রয়োজন ছাড়া পড়ুয়াদের মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও দূরে থাকার উপদেশ দেন মৃণালবাবু।
একজন মানুষের জীবনে বাবা-মায়ের ভূমিকা কতটা, সে বিষয়টি সেমিনারে ব্যাখ্যা করেন তিনি। প্রথমে উপস্থিত পড়ুয়াদের চোখ বন্ধ করতে বলেন। এরপর বাবা-মায়েরা সন্তানদের জন্য কতটা আত্মত্যাগ করেন ও বিনিময়ে সন্তানরা বাবা-মায়ের জন্য কী করে, সেই সম্পর্কে বলতে শুরু করেন। আবহসংগীতের সঙ্গে মৃণালবাবুর কথার মিশেলে প্রত্যেকেই যেন এক অন্য জগতে চলে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায়, অধিকাংশের গাল বেয়ে জল পড়ছে। পড়ুয়াদের কয়েকজন তো কঁাদতে শুরু করে। বাবা-মায়ের আত্মত্যাগ ও তাঁদের প্রতি সন্তানদের খারাপ ব্যবহার উপলব্ধি করেই ভেঙে পড়ে অনেকে।
এদিন প্রাক্তনীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রাক্তনী শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনে সারাবছর ধরে অনুষ্ঠান হয়েছে। এদিন সমাপ্তি হল। প্রত্যেকেই দারুণ উপভোগ করেছি।’ আরেক প্রাক্তনী সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক- সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় এই আয়োজন করা হয়েছে। আমরা সফল।’