বাণীব্রত চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি: ময়নাগুড়ি (Mainaguri) শহরের রাস্তা সম্প্রসারণের প্রকল্প কেন্দ্রের অনুমোদন পেলে শহরের ৫৫০ থেকে ৬০০ দোকানপাট ও গ্যারাজ ভাঙা পড়বে বলে আশঙ্কা। ভাঙা পড়তে পারে কয়েকটি সরকারি, বেসরকারি কমপ্লেক্স এবং ১১৫ বছরের পুরোনো শহরের রাধিকা লাইব্রেরি (Radhika Library)। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুরসভার বৈঠকের পর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের নতুন নকশার কথা শুনে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মহুয়া গোপ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ী এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও পুরসভার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আলোচনাসাপেক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
ময়নাগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মনোজ রায় বলেন, ‘আমরাই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বারবার এই দাবি জানিয়েছি। তেমন কোনও সমস্যা হবার কথা নয়। ডুয়ার্সের মানুষ উপকৃত হবেন। ট্রাফিক মোড়েই কিছুটা সমস্যা হবে। আমরা জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের হয়ে পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা বলব।’
মালবাজার থেকে ময়নাগুড়ি শহর হয়ে ধূপগুড়ির দিকে গিয়েছে ৭১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। শহরের দাড়িভেজা মোড় থেকে বিডিও অফিস মোড় পর্যন্ত আনুমানিক চার কিলোমিটার রাস্তা সাত মিটার থেকে বাড়িয়ে দুটি সার্ভিস রোড সহ ২১ মিটার চওড়া করার পরিকল্পনা রয়েছে। ময়নাগুড়ি শহরে দাড়িভেজা মোড় থেকে বিডিও অফিস মোড় পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা সাত মিটার থেকে বাড়িয়ে দশ মিটার, এরপর দুই পাশে পাকা রেলিং দিয়ে দু’দিকে আরও সাড়ে পাঁচ মিটার চওড়া দুটি সার্ভিস রোড নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া দুই পাশে বড় নর্দমা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (এনএইচ-৯) দেবব্রত ঠাকুর বলেন, ‘পুরোটাই এখনও পর্যন্ত প্রস্তাব। এই প্রস্তাব দিল্লিতে পাঠানো হবে।’
আংশিক ভাঙা পড়তে পারে ময়নাগুড়ি শহরের ঐতিহ্য ১১৫ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ আমলে তৈরি রাধিকা লাইব্রেরি। তাছাড়া ভাঙার তালিকায় থাকতে পারে নতুন বাজার বাস টার্মিনাসের মার্কেট কমপ্লেক্সের একাংশ। রয়েছে পাশাপাশি পুরোনো এবং নতুন বাজারের অসংখ্য দোকানপাট। গুমটি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিমলেন্দু চৌধুরী বলেন, ‘এই নকশা অনুযায়ী রাস্তা সম্প্রসারণ করা হলে ৫৫০ থেকে ৬০০ দোকানপাট অর্থাৎ দুটি বাজারের একাংশ ভাঙা পড়বে। সবাইকে কীভাবে পুনর্বাসন দেবে প্রশাসন, সেটাও ভাববার বিষয়।’ ময়নাগুড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুমিত সাহা বলেন, ‘পুরো বাজারটাই ভাঙা পড়বে বলে আশঙ্কা করছি আমরা।’ নতুন বাজার ওয়েলফেয়ার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সিদ্ধার্থ সরকার বলেন, ‘আতঙ্কে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও নতুন বাজার মার্কেট কমপ্লেক্সের ওপরের অংশ দোকান নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। প্রশাসনকে এই বিষয়ে জানানোও হয়েছে।’
সড়ক সম্প্রসারণ ও উচ্ছেদ নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যেও গুঞ্জন। গুমটি ব্যবসায়ী পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শশধর রায় বলেন, ‘৩৩ বছর ধরে সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে ফুটপাথে ব্যবসা করছি। লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করে সংসার প্রতিপালন সহ ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছি। এখানে উন্নয়নের স্বার্থে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে তা দেব। উন্নয়নের পক্ষে আমিও। আবার কোথাও গিয়ে বসব। নতুন করে জায়গা খুঁজে নিতে হবে।’ নতুন বাজার বাস টার্মিনাসের মার্কেট কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী নূপুর দত্ত বলেন, ‘সবকিছু শুনে মাথায় হাত পড়েছে। পরিস্থিতি যা তাতে কমপ্লেক্সের সামনের দিক ভাঙা পড়লে আমার দোকান সহ বহু দোকানপাট ভাঙতে হবে।’
ময়নাগুড়ি নাগরিক চেতনার কার্যনির্বাহী সভাপতি অমল রায় বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বহু মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে। সকলের সঙ্গে বসে সার্বিক আলোচনাসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। উন্নয়নের নামে হঠকারী কোনও সিদ্ধান্ত গৃহীত না হওয়াই সমীচীন।’