বাণীব্রত চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি: অপরাধ কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। আর সেই কারণেই সন্তান ও গৃহবধূকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছেন না শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এমনই বেনজির ঘটনা ঘটেছে ময়নাগুড়িতে (Mainaguri)। কন্যার জন্মের দিন তার বাবা গিয়েছিলেন হাসপাতালে। সেখানে একরাত কাটান। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যান সদ্যোজাতের বাবা। গৃহবধূর ছুটির দিনে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে টাকা দেওয়ার কথা। বারবার শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফোন করেও তাঁদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। অবশেষে হাসপাতালের বকেয়া মেটান গৃহবধূর বাবা। সদ্যোজাতকে নিয়ে ওই গৃহবধূ হাসপাতাল থেকে সোজা আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে। এভাবেই কেটে গিয়েছে টানা দেড় বছর। কিন্তু গৃহবধূকে ফিরিয়ে নেয়নি শ্বশুরবাড়ির লোকজন। অগত্যা সোমবার ওই গৃহবধূ পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।
অভিযোগকারী মহিলার সামাজিক মতে বিয়ে হয় ময়নাগুড়ি চূড়াভাণ্ডার এলাকার বাসিন্দা গৌতম রায়ের সঙ্গে ২০২২ সালে। মহিলার বাড়ি ময়নাগুড়ির খাগড়াবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাশিলারডাঙ্গায়। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ওই গৃহবধূ। অভিযুক্ত স্বামী গৌতম মেয়ের জন্মের সময় হাসপাতালে ছিলেন। কিন্তু পরের দিন সকালেই হাসপাতাল থেকে তিনি উধাও হয়ে যান বলে অভিযোগ। বারবার খোঁজ করেও তঁার কোনও হদিস মেলেনি। তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পায়নি বধূর পরিবারের লোকজন। ছুটির দিন হাসপাতালের বকেয়া টাকা মেটাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় গৃহবধূর বাবাকে। তিনি মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাননি। শেষে অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে হাসপাতালের বিল মেটান। মেয়েকে ছুটি করিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান।
দেড় বছর ধরে বাপের বাড়িতে রয়েছেন ওই গৃহবধূ। এদিন গৃহবধূ বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই বিভিন্নরকমভাবে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। সবকিছু মাথা পেতে নিয়েছি। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমার অপরাধ কন্যাসন্তান প্রসব করা। হাসপাতালে শিশুর জন্মের পর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেউ যোগাযোগ করেননি। এতদিন অপেক্ষা করেছি। বাধ্য হয়েই ময়নাগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’
গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘ওদের পুত্রসন্তান চাই। নাতনির জন্মের পরেই মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন বেঁকে বসলেন। বাড়িতে নেবেন না আমার মেয়েকে। জামাই গৌতমকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। পরে ঋণ করেই মেয়ে এবং নাতনিকে হাসপাতাল থেকে সোজা আমার বাড়িতে নিয়ে আসি।’ এদিকে, অভিযুক্ত গৌতম রায়কে পাওয়া যায়নি। গৌতম রায়ের বাবা ধীরেন রায় বলেন, ‘অভিযোগ একেবারেই মিথ্যে। ওরা আসেনি। আমরা তিনবার আনতে গিয়েছি। এখনও আসতে চাইলে আমরা পুত্রবধূ এবং নাতনিকে সাদরে গ্রহণ করব।’ ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ জানিয়েছে, এক গৃহবধূ অভিযোগ করেছেন তঁাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিচ্ছে না। অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।