মালবাজার: অবশেষে পদত্যাগ করলেন স্বপন সাহা। বৃহস্পতিবার লাটাগুড়িতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে উৎপল ভাদুড়ির নাম ঘোষণা করলেন জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ। শীঘ্রই নতুন পদে শপথ নেবেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উৎপল। এদিন দীর্ঘ বৈঠকের পর মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক, বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায়, মাল ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুশীলকুমার প্রসাদ, টাউন সভাপতি অমিত দে, জেলার যুব সভাপতি সন্দীপ ছেত্রীকে পাশে নিয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন মহুয়া।
লাটাগুড়িতে (Lataguri) দলীয় কার্যালয়ে মাল পুরসভার (Mal Municipality) তৃণমূল কাউন্সিলারদের নিয়ে বৈঠক শুরু হয় দুপুর সাড়ে বারোটায়। ঘণ্টা দেড়েক বৈঠকের পর দলের উচ্চ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমকে জানান মহুয়া। মাল পুরসভার চেয়ারম্যান পদে উৎপল ভাদুড়ির নাম ঘোষণা করেন। তবে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা হয়নি। তবে, পুরসভার দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার নারায়ণ দাসকে।
লাটাগুড়িতে বৈঠক শেষ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতায় বসে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন স্বপন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘… আজ বোধহয় সেই আমিই রণক্লান্ত। শত শত মিথ্যা চক্রান্তে বিদ্ধ ও রক্তাক্ত।’ এরপরই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে স্বপন লিখেছেন, ‘দিদি তাই আমি মালবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগ করছি। এই চিঠিকে আমার পদত্যাগপত্র হিসাবে দেখার অনুরোধ করছি।’ এদিন স্বপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দলের নির্দেশ মেনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জলপাইগুড়ির জেলা শাসকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি। দল যেটা করেছে নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা করেই করেছে।’
জেলা সভানেত্রী জানান, দল থেকে সাসপেন্ড হলেও স্বপদে বহাল ছিলেন স্বপন সাহা। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়েছে মাল পুরসভায়। যার অবসান ঘটানো খুব প্রয়োজন ছিল। চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করলে দলের তরফে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হত। সেক্ষেত্রে দলের সমস্ত কাউন্সিলার তঁার বিরুদ্ধে ভোট দিতেন। মহুয়া বলেন, ‘সোম-মঙ্গলবারের মধ্যেই নতুন চেয়ারম্যানের শপথগ্রহণের সম্ভাবনা আছে।’ উৎপল এদিন বলেন, ‘সকল কাউন্সিলারের মতামত নিয়েই আগামীদিনে মাল পুরসভার কাজকর্ম চলবে। দলের নির্দেশ মেনে নাগরিক পরিষেবা দেব।’
গত সেপ্টেম্বরে দল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পর প্রায় দেড় মাস ছুটিতে ছিলেন স্বপন সাহা। নভেম্বরের মাঝামাঝি পুরসভায় তিনি নিজের পদে যোগ দিতেই জটিলতা বেড়ে যায়। চেয়ারম্যানের পদে স্বপন থাকলেও পুরসভার দায়িত্ব দেওয়া হয় ভাইস চেয়ারম্যান উৎপলকে। মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক নিজে সেই ঘোষণা করেছিলেন। তার পরেও জট কাটেনি। সে সময় স্বপন জানিয়েছিলেন, একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তিনি পদত্যাগ করবেন।
পরবর্তীতে জেলা সভানেত্রী মহুয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কাউন্সিলারদের নিয়ে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করার। কয়েকদফা বৈঠকে প্রথমে জট কাটেনি। অবশেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে উৎপলকে দায়িত্ব দিল দল।
সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজা দত্ত বলেন, ‘স্বপন সাহা আরও আগে পদত্যাগ করলে ওঁর সম্মান রক্ষা হত, যেটা উনি পারলেন না।’ যঁার মামলার জেরে মাল পুরসভায় এত তোলপাড় সেই আইনজীবী সুমন শিকদার বলেন, ‘আমার লড়াই অর্ধসমাপ্ত। প্রাক্তন চেয়ারম্যানের পাশাপাশি তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে হবে।’ বিজেপির মাল বিধানসভার আহ্বায়ক রাকেশ নন্দী বলেন, ‘বিজেপি বরাবরই মাল পুরসভাকে দুর্নীতিগ্রস্ত দাবি করেছে। আজ তৃণমূল নিজেই তা প্রমাণ করে দিল তাদের দলের চেয়ারম্যানকে সরিয়ে। নতুন চেয়ারম্যানকে স্বচ্ছভাবে কাজ করার অনুরোধ করব।’