উত্তরবঙ্গ ব্যুরো: আবাস যোজনায় অভিযুক্ত মাল পুরসভার (Mal Municipality) চেয়ারম্যান স্বপন সাহাকে নিয়ে সম্প্রতি কম হইচই হয়নি। দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আবারও মাল পুরসভার নাম যুক্ত হল। অভিযোগ, এই পুরসভার অস্থায়ী কর্মী রঞ্জিত দাস প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি কারবার চালাচ্ছিলেন। ভুয়ো পোর্টাল এবং ভুয়ো অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেখিয়ে তিনি বাজার থেকে প্রচুর টাকা তুলেছেন। এমনটাই জানিয়ে শিলিগুড়ির এক ব্যক্তি রঞ্জিতের বিরুদ্ধে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেইমতো পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্ত পুরকর্মী অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, তিনি কারও কাছে টাকা নেননি। বরং চাকরি পাওয়ার জন্য নিজেই কলকাতানিবাসী একজনকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। পাশাপাশি বিষয়টি তিনি জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারকে আগেভাগেই জানান বলে তাঁর দাবি। চেয়ারম্যান স্বপন সাহা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ভাইস চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ইস্ট) রাকেশ সিং বলেন, ‘অভিযোগ হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শিলিগুড়ির (Siliguri) খালপাড়ানিবাসী শিবাজি প্রসাদের অভিযোগ, প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে তাঁর ছেলের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে রঞ্জিত তঁার কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা নেন। টিচার্স ট্রেনিং নেওয়ার সময় রঞ্জিতের সঙ্গে শিবাজির ছেলের পরিচয় হয়। এরপরই রঞ্জিত শিবাজিকে তঁার ছেলের চাকরির বিষয়ে প্রস্তাব দেন। ছেলে সরকারি চাকরি পাবে ধরে নিয়ে শিবাজি না করেননি। প্রস্তাবের প্রথম দিনই তিনি এক লক্ষ টাকা দিয়ে দেন। তিনদিন পর বাকি এক লক্ষ টাকাও তিনি রঞ্জিতের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন। অভিযোগ, প্রথম এক লক্ষ টাকা দেওয়ার পরদিনই ছেলে চাকরি পেয়ে গিয়েছে জানিয়ে শিবাজিকে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেওয়া হয়। একটি পোর্টাল দেখিয়ে সেখানে শিবাজির ছেলের নাম দেখানো হয়। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে শিবাজির ছেলে শিলিগুড়ির একটি স্কুলে যেতেই তঁার ভুল ভাঙে। সেই নিয়োগপত্রটি জাল বলে ধরা পড়ে। গোটা বিষয়টি রঞ্জিতকে বলতেই তিনি তা মেনেও নেন বলে অভিযোগ। তবে তারপর এক বছর কেটে গেলেও রঞ্জিত ওই টাকা ফেরত দেননি। গোটা বিষয়টি জানিয়ে শিবাজি রবিবার শিলিগুড়ি থানার অন্তর্গত খালপাড়া ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করেন।
রঞ্জিত মাল পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষিকা। রঞ্জিতের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সংশিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজু দে, রাকেশ বসুর পাশাপাশি আইনজীবী সুমন শিকদার, সিপিএমের মাল সার্কেল সম্পাদক রাজা দত্তের মতো অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আরও অভিযোগ, শিবাজি রবিবার মালে এসে প্রথমে রঞ্জিতের সঙ্গে দেখা করে টাকা ফেরতের দাবি জানান। বৃদ্ধকে সেই টাকা তো ফেরত দেওয়াই হয়নি, উপরন্তু রঞ্জিতের পরিবার তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তারপরই শিবাজি পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রঞ্জিত অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। উলটে আমিই প্রতারিত হয়েছি। ররিবার আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার অনেক আগেই আমি জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি। প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চাকরি পাওয়ার জন্য আমি কলকাতানিবাসী সুবীর দে নামে একজনকে টাকা দিই। প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছি বলে জানিয়ে আমাকে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেওয়া হয়।’
(সংকলন : সুশান্ত ঘোষ, অভিষেক ঘোষ ও শমিদীপ দত্ত।)