অভিষেক ঘোষ, মালবাজার: মাল পুরসভার (Mal Municipality) প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বপন সাহার বিরুদ্ধে তো আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এবার বর্তমান চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ির বিরুদ্ধে কাটমানি (Cut money) চাওয়ার অভিযোগ উঠল। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে পুরসভার ফিন্যান্স অফিসার (Finance officer) মিঠুন দাসেরও। শিবরতন আগরওয়াল নামের এক ঠিকাদারের অভিযোগ, তাঁর বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিতে ঘুষ চেয়েছেন উৎপলরা। এই ঘটনায় মালবাজার থানায় ডাকযোগে অভিযোগ দায়ের করেছেন সেই ঠিকাদার। রবিবার সন্ধ্যায় মালবাজার থানার আইসি সৌম্যজিৎ মল্লিক বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত এমন কোনও অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’ থানার পাশাপাশি জলপাইগুড়ি জেলা শাসক, পুলিশ সুপার, মিউনিসিপ্যাল অ্যাফেয়ার্সের প্রধান সচিবের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। এদিকে, সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন উৎপলরা।
শিবরতনের অভিযোগ, ‘সম্প্রতি আমি পুরসভায় গিয়েছিলাম। তখন আমার কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে।’ এদিকে, এদিন দুপুরে পুরসভায় সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন চেয়ারম্যান উৎপল। সেখানে কাউন্সিলার অজয় লোহার এবং পুলিন গোলদারকে পাশে নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। উৎপল বলেন, ‘সমস্তটাই ভিত্তিহীন অভিযোগ। নিয়ম বহির্ভূতভাবে সরকারি টাকা দেওয়া হয়েছে সেই ঠিকাদারকে। আমরা আদালতের মাধ্যমে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার আবেদন জানাব। ইতিমধ্যেই সমস্ত বিষয়ে লিখিতভাবে রাজ্য নগর উন্নয়ন দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে জানিয়েছেন পুরসভার ফিন্যান্স অফিসার মিঠুন।
২০১৭-’১৮ সালে মালবাজার শহরে হাইমাস্ট লাইট বসানোর বরাত পেয়েছিলেন শিলিগুড়ির ঠিকাদার শিবরতন। সেই কাজের ৫০ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার একটি বিল পুরসভায় জমা করেন। পরবর্তীতে মাল পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান স্বপন সাহা পাঁচটি কিস্তিতে ৪৫ লক্ষ টাকা ঠিকাদারকে দেন। ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বকেয়া ছিল। সেই বকেয়া বিলের জন্য গত বছর অক্টোবর মাসে শিবরতন রাজ্য নগর উন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিবের কাছে আবেদন করেন। বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। ঠিকাদারের আইনজীবী সুমন শিকদার জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে তৎকালীন পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার শুনানি হতে হতে চেয়ারম্যান পদে বসেন উৎপল। শুনানির পর সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু নির্দেশ দেন, মামলাকারীকে পুরসভায় ডেকে আলোচনা করতে হবে। সেই আলোচনায় কী সমাধান উঠে এল, সেটা জানাতে হবে আদালতে। পরে পুরসভায় তাঁদের মধ্যে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় যে ২৫ জুনের মধ্যে বাকি ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে শিবরতনকে। পুরসভার দাবি, সময়ের মধ্যে বকেয়া মেটানো হয়নি বলেই মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন সেই ঠিকাদার।
পুরসভার তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, শিবরতন যে কাজটি করেছিলেন সেটার ওয়ার্ক অর্ডার থাকলেও তৎকালীন চেয়ারম্যান কোনও টেন্ডার করেননি। সেই কাজের জন্য অর্থ দপ্তর এবং নবান্নের অনুমোদনের কোনও কপিও পুরসভার অফিসে মেলেনি। তাই উৎপলরা বলছেন, এই কাজ করানোর প্রক্রিয়াটি অবৈধ।
মামলাকারীর আইনজীবী সুমন বলেন, ‘শীঘ্রই বকেয়া বিল না মেটালে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হবে।’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যদি টেন্ডার না হয়ে থাকে তবে আগের বিলগুলো কীভাবে দেওয়া হয়েছে? মালের কাউন্সিলার পুলিন গোলদার বলেন, ‘পরবর্তী শুনানিতে সরকারপক্ষের উকিল সমস্ত বেআইনি লেনদেনের বিষয়গুলো আদালতের কাছে তুলে ধরবেন। ’