অভিষেক ঘোষ, মালবাজার: কথায় বলে, ‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা’। তাহলে কি ৩৬ ঘায়ের ভয়ে লুকিয়ে আছে মাল পুরসভার কর্মী প্রসেনজিৎ দত্ত, নাকি এর পেছনে আছে বড় কোনও রহস্য? কারণ, আফগান নাগরিকদের জাল জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত প্রসেনজিৎ দত্ত পাঁচ মাস পরেও অধরা। যদিও মাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রোশন প্রদীপ দেশমুখ বলেন, ‘পুলিশ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত করছে, তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।’ তবে এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে মাল পুরসভার চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি বলেন, ‘পুলিশের উচিত ওকে খুঁজে বের করা। সে সামনে এলেই অনেক রহস্য উন্মোচন হবে।’
গত বছর অক্টোবর মাসে দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসন বিভাগের হাতে আটক হয় ছয় আফগান নাগরিক। ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে তারা ভারত থেকে কাবুলে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক থাকায় তাদের আটক করে খবর দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। সিবিআই তদন্তে জানতে পারে, এই ছয়জন আফগান নাগরিকের পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। আর পাসপোর্ট তৈরি করতে যে নথিপত্র প্রয়োজন তা দেওয়া হয়েছে মাল পুরসভা থেকে।
পুরসভার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধীকরণ বিভাগ থেকে ১১টি শংসাপত্র তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল সেই বিদেশি নাগরিকদের। সেই জাল শংসাপত্র তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে স্থানীয় কিছু নাগরিকের নথিপত্র। এই জালিয়াতি কাজের দায়ে শোকজ করা হয় মাল পুরসভার জন্ম-মৃত্যু বিভাগের ইনচার্জ প্রসেনজিৎকে। গত বছর ১৭ ডিসেম্বর তৎকালীন চেয়ারম্যান স্বপন সাহা নিজে মালবাজার থানায় প্রসেনজিতের নামে অভিযোগ করেন। সেদিন থেকেই পলাতক প্রসেনজিৎ।
শুধু জাল পাসপোর্ট তৈরিতে সহযোগিতার অভিযোগ নয়, প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে চা বাগানের শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তছরুপের। বীরপাড়া থানার ডিমডিমা চা বাগান, কালচিনির তোর্ষা চা বাগানের দুই শ্রমিকের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ডেথ ক্লেম করতে যে জাল মৃত্যুর শংসাপত্র ব্যবহার হয়েছে, সেগুলো মাল পুরসভা থেকে ইস্যু করা। আর সেগুলো দেওয়া হয়েছে প্রসেনজিৎ দায়িত্বে থাকাকালীন। সেই দুই শ্রমিক পরিবারের তরফেও থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বীরপাড়া থানার পুলিশ মাল পুরসভা এবং মাল থানায় এসেছে তদন্তের জন্য।
এই ঘটনায় আইনজীবী সুমন শিকদার বলেন, ‘এই জাল শংসাপত্র কাণ্ডে রাঘববোয়ালরা জড়িত আছে, তাই প্রশাসন প্রসেনজিতের গ্রেপ্তার নিয়ে ভাবছে না। সে গ্রেপ্তার হলেই অনেক দেশদ্রোহীর নাম সামনে চলে আসবে।’ সিবিআই এই ঘটনার তদন্তভার নিলে তাহলেই প্রসেনজিৎকে গর্ত থেকে বের করা যাবে বলে মনে করেন বিজেপির টাউন মণ্ডল সভাপতি নবীন সাহা।
এমন দেশবিরোধী কাজের পর প্রসেনজিতের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে মালবাজার শহরে (Malbazar)। সেইসঙ্গে পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শহরবাসী। প্রভাবশালীদের সহযোগিতা ছাড়া প্রসেনজিৎ যে আত্মগোপন করে থাকতে পারে না সেটা নিয়েও চর্চা চলছে পুরসভায়। পুরকর্মীদের বড় অংশ চাইছেন, শীঘ্রই পুলিশ প্রসেনজিৎকে গ্রেপ্তার করুক।