শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫

Malda | খোলা আকাশের নীচে কাটছে দিন, রাতে আতঙ্কে ত্রাণশিবিরের মহিলারা

শেষ আপডেট:

শেখ পান্না, রতুয়া: কেউ এক মাস, তো কেউ দেড় মাস। ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন শ্রীকান্তটোলা ও কান্তটোলার প্রায় ৬০টি পরিবার। যদিও প্রশাসনের কথায়, অত নয় ৩০টি পরিবার। পরিবারের পুরুষ মানুষ আয়ের আশায় বাইরে। কাজ না করলে পেট ভরবে কীভাবে? তাই প্রায় সব পরিবারের মহিলারা কার্যত অসহায়। কারণ, আরজি করের ঘটনায় যখন সারা দেশ তোলপাড়, ঠিক তখনই মালদায় উঠে এল বানভাসিদের মর্মান্তিক ও আতঙ্কের ছবি।

দিনের আলো কেটে যায় কোনওরকমে। কিন্তু অন্ধকার নামতেই একরাশ ভয় ভিড় করে বুকে। ওদের কথায়, ‘জীবজন্তুর চেয়ে এখন মানুষেরই ভয় বেশি।’

কেন? বানভাসি মহিলাদের কথায়, আরজি করের নৃশংসতা তাঁরা দেখছেন। দেখছেন আর ভাবছেন নিজেদের কথা। তিলোত্তমা তো ছিল নিরাপদে, কিন্তু তাঁরা। তাঁদের না আছে স্থায়ী বাসস্থান, না আছে নিরাপত্তা।

বাড়ি ছাড়ার প্রথম কয়েকদিন প্রশাসনের তরফে মিলেছিল একটা করে পলিথিন। ব্যস… ওই পর্যন্তই। তারপর আর দেখা যায় না কর্তাদের। নেই নজরদারিও।

গত বছরের মতো এবছরও রতুয়া-১ ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতে শুরু হয়েছে গঙ্গার তাণ্ডব। সর্বস্বান্ত শ্রীকান্তটোলা ও কান্তটোলা সহ বেশ কিছু গ্রামের মানুষ। ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি সবই তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গাগর্ভে। গৃহহীন কয়েকশো পরিবার। বিপন্ন মানুষের অভিযোগ, নদীর তাণ্ডবে কপর্দকহীন হয়ে গেলেও শুধুমাত্র পলিথিন ছাড়া সরকারি আর কোনও সহায়তাই পাননি তাঁরা। কথা দিয়েও এখনও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন। অন্যের জমি কিংবা বাঁধের উপর ত্রিপল টাঙিয়েই পরিবার নিয়ে দিন গুজরান করতে হচ্ছে তাঁদের। শ্রাবণের বৃষ্টি আর ভাদ্রের চড়া রোদে মরণদশা তাঁদের। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে বাড়ির মহিলাদের। তাঁরা নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন।

কেন নিরাপত্তার অভাব? করুণ মুখে কল্যাণী মণ্ডলের বক্তব্য, ‘এখন আমাদের মাথার উপর ছাদ নেই। ঘর-বাড়ি, গঙ্গামায়ের গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। আমার স্বামী শংকর মণ্ডল ভিনরাজ্যে কাজ করেন। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানেই থাকতে হচ্ছে। খোলা আকাশের নীচে রাত কাটানো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। জীবজন্তুর চেয়ে এখন মানুষেরই ভয় বেশি। রাতের অন্ধকারে কে কখন ঢুকে পড়বে জানি না। তখন কী করব? সেই ভয়েই থাকতে হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের জীবনের কোনও মূল্য নেই। দেখা যাক, এভাবে যুদ্ধ করে আর কতদিন বাঁচতে পারি!’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘গত বছরই বুঝতে পেরেছিলাম, কান্তটোলা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আশঙ্কাই সত্যি হল। সরকারের কাছে দাবি রেখেছিলাম পুনর্বাসনের। কিন্তু পেলাম না। একটি ত্রিপল টাঙিয়ে পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে।’

একই কথা কান্তটোলা গ্রামের বাসিন্দা রুমা মণ্ডলের। নদীর ভাঙন ঘর থেকে বাইরে নিয়ে এসেছে তাঁকে। জানালেন, ‘মাসখানেক আগে গঙ্গার ভাঙনে ভিটেমাটি সহ ঘরবাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। পরিবারের সবাই অন্য লোকের আমবাগানে ত্রিপল টাঙিয়ে বাস করছি। সরকারি ত্রাণ বলতে শুধু ত্রিপল। রাতের অন্ধকারে নদীর ধারে গিয়ে শৌচকর্ম করতে হচ্ছে। পানীয় জল অন্য পাড়া থেকে নিয়ে আসতে হচ্ছে। রোজগারের জন্য স্বামীকে মাঝেমধ্যে দু’চারদিনের জন্য বাইরেও যেতে হয়। ছোট ছোট সন্তান নিয়ে ত্রিপলের নীচে রাত কাটাতে হচ্ছে। রাতে আতঙ্কে ঘুম আসে না। সন্ধের পর শৌচকর্ম করতে যেতেও ভয় হয়। এখানে মহিলাদের নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই। রাতবিরেতে দুষ্কৃতীদের হাতে পড়লে কী হবে, ভেবেই শিউড়ে উঠছি।’ নজরদারি নেই কেন? প্রশাসনিক এক কর্তার মতে, ‘চলছে তো।’

Kuhelika Barman
Kuhelika Barmanhttps://uttarbangasambad.com/
Kuhelika Barman is working as Sub Editor Since 2016. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.

Share post:

Popular

More like this
Related

SIR | শাসক দলের নেতার বাড়ি থেকে বিলি করা হচ্ছে SIR-এর ফর্ম! সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও

হরিশ্চন্দ্রপুর: আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন (Assembly Election 2026)।...

Bolla Kali | স্টেশনে থিকথিকে ভিড়, ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত! বোল্লাকালীপুজোর জন্য স্পেশাল ট্রেনের দাবি ভক্তদের

গাজোল: দক্ষিণ দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী বোল্লাকালীপুজোর (Bolla Kali) সময় স্পেশাল...

Samsi | রাতের আঁধারে বেআইনি পারাপার! মাঝ নদীতে নৌকা উলটে মৃত্যু

মুরতুজ আলম,সামসী: মালদা জেলার চাঁচল-১ ব্লকে অবস্থিত জগন্নাথপুর-মুকুন্দপুর ঘাট।...

Jamaldaha | সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেলেন জামালদহের শীর্ষলেন্দু, খুশির জোয়ারে ভাসছে গোটা শহর

জামালদহ: ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল মেধাবী ছেলেটি।...