কল্লোল মজুমদার, মালদা: এই তো কিছুদিন আগে শহরগুলি সাফাই নিয়ে পুরপ্রধানদের রীতিমতো ধমক দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। আর তারপরেই মালদার (Malda) ইংরেজবাজার (English Bazar) সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভার পুরপ্রধানরা ঘোষণা করেন সকালে নয়, এবার থেকে রাতে সাফাই হবে।
কিন্তু সেই ঘোষণা থেকে গিয়েছে ঘোষণাতেই। রাত গড়িয়ে ভোর হয়, ভোর শেষ হয়ে বেলা হয়। তবু ব্যস্ততম রাস্তার ধারে পড়ে থাকে জঞ্জাল। নাকে রুমাল ছাড়া চলা দুষ্কর। সেই জঞ্জালে পড়ে থাকা খাদ্যসামগ্রীর লোভে রাস্তার উপর ভিড় জমায় গোরু, ষাঁড়ের দল।
কেন হয় না সাফাই, প্রশ্ন করতেই এলাকাবাসীর ব্যাঙ্গাত্মক উত্তর, ‘হয় তো, দুপুরে।’
মালদা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পিঁয়াজি মোড় থেকে দুর্গাকিংকর ভট্টাচার্যের বাড়ি পর্যন্ত। এই রাস্তার উপরে এনসিসি অফিসের সামনে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা হয়েছে ভাগাড়। এলাকার বিভিন্ন রাস্তা থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ করে ওই অস্থায়ী ভাগাড়ে জড়ো করা হয়। পরে পুরসভার বড় গাড়ি এসে সেই জঞ্জাল তুলে নিয়ে যায়। শুধু এই এলাকাতেই নয়, শহরের রামকৃষ্ণ কলোনি, রাজমহল রোডেও এমন অস্থায়ী ভাগাড় আছে। এখনও সেই ভাগাড় পরিষ্কার হতে দুপুর গড়িয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ পিঁয়াজি মোড় হয়ে স্কুলের পথে যাচ্ছিল একদল পড়ুয়া। কিন্তু এনসিসি অফিসের সামনে থমকে দাঁড়াতে হয়। রাস্তার উপর নেমে এসেছে জঞ্জাল। সেখানে খাবারের খোঁজে ভিড় জমিয়েছে গোরু-ষাঁড়। এদিক-ওদিক থেকে গাড়ির যাতায়াত। পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়ে চলাচল সাময়িক বন্ধ। বেশ কিছুক্ষণ আটকে পড়েন পথচারীরা। প্রশ্ন ছুড়তেই অমল রায় নামের এক পড়ুয়া বলে ওঠে, ‘এ তো প্রতিদিনের ঘটনা। দুর্গন্ধে এই রাস্তা দিয়ে চলা দায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাতে শহর পরিষ্কার করার জন্য। কিন্তু মালদায় তো কিছুই হয় না।’
আরও একধাপ উঠে রাজ্য সরকারি কর্মী অমিত মণ্ডলের কটাক্ষ, ‘এ শহরে আর কিছু হওয়ার নেই। নিয়ম হয় শুধুই ভাঙার জন্য।’
এলাকার মানুষের বক্তব্য, বারবার এলাকার কাউন্সিলারদের বলেও কোনও লাভ হয়নি। মুখ বন্ধ করে রাখা ছাড়া তাঁদের আর কোনও গতি নেই। এখন এসবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষ।
এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলার নিবেদিতা কুণ্ডুর সাফ জবাব, ‘এই এলাকাটি আমাদের ওয়ার্ডের কাছে অত্যন্ত অস্বস্তিকর বিষয়। বারবার আমি বিষয়টি নিয়ে পুরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তবে এখনও সমাধান করতে পারিনি।’ যদিও নিবেদিতাদেবীর আশা, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ইতিমধ্যেই শহরের বেশ কিছু জায়গায় নৈশকালীন সাফাই শুরু হয়ে গিয়েছে। আশা করছি খুব অল্প সময়েই মধ্যেই এই এলাকাতেও সাফাই শুরু হয়ে যাবে। তাহলেই সমস্যার সমাধান হবে। মানুষের সুবিধা হবে।’