মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

Malda Upanayan | ধুমধাম করে মেয়ের উপনয়ন, পৈতে দিয়ে বৈদিক রীতি ফেরাল মালদার সিদ্ধান্ত পরিবার   

শেষ আপডেট:

মালদা: ব্রাম্মণ পরিবারে ছেলেদের উপনয়ন প্রচলিত এক রীতি। কিন্তু শিশু কন্যার উপনয়ন সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে একধরনের বিদ্রোহ। এমনই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তরবঙ্গে প্রথম নিজের মেয়ের উপনয়ন দিলেন মালদা শহরের এক ব্রাম্মণ পরিবার। রীতিমতো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উপনয়নের অনুষ্ঠান এবং হাজারো মানুষের আমন্ত্রণে শোরগোল পড়ে গেল মালদা সহ উত্তরবঙ্গ জুড়ে। গত শনিবার ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেছে সেই ৯ বছরের শিশুকন্যা৷

দীক্ষিত কন্যার নাম মধুপর্ণা সিদ্ধান্ত৷ বয়স ন’বছর৷ মালদা শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী৷ বাবা মনোজকুমার সিদ্ধান্ত পেশায় ব্যবসায়ী৷ মা পায়েল সিদ্ধান্ত বাড়ির কাজকর্ম সামলান৷ মালদা শহরের ইংরেজবাজার থানার অধীন ঘোড়াপির ঘোষপাড়ায় তাঁদের বাড়ি৷ মধুপর্ণারা দু’বোন৷ সে ছোট৷ বড় মধুশ্রী কলকাতায় পড়াশোনা করে৷

মনোজবাবু জানান, ‘মালদা তথা উত্তরবঙ্গে আমিই প্রথম মেয়ের পৈতে দিচ্ছি৷ আগে মেয়েদের পৈতে হত৷ কিন্তু পরবর্তী সময়ে মেয়েদের দমন করার জন্যই হোক বা অন্য কোনও কারণ, মেয়েদের পৈতে দেওয়া বন্ধ  হয়েছে৷ আমি মানুষের এই চিন্তাধারা বদল করতে চাই৷ ভেবেছিলাম, দুই মেয়ের পৈতেই একসঙ্গে দেব৷ কিন্তু বড় মেয়ে লজ্জা পাচ্ছে৷ আসলে এখন ও বড় হয়ে গিয়েছে৷ তাই হয়তো এই লজ্জা৷ তাই ছোট মেয়ের পৈতে দিয়েছি৷’

মা পায়েলদেবীর বক্তব্য, ‘বৈদিক যুগে ছেলে ও মেয়ে, দু’জনেরই পৈতে হত৷ মেয়েদের দমিয়ে রাখতে একসময় তাদের পড়াশোনা, পৈতে, বাইরে বেরোনো সবকিছুই বন্ধ করা হয়েছিল৷ সমাজের চাপেই সেসব বন্ধ হয়েছিল৷ এখন মেয়েদের সবকিছুই আবার করানো হচ্ছে৷ তাহলে পৈতে কেন বাদ যাবে? এটাও হওয়া উচিত৷ ও ছোট থাকাকালীনই আমরা ওকে পৈতে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম৷ এতদিন সঠিক বয়স না হওযায় কিছু করা হয়নি৷ এবার সেটাই করা হল৷ ও যদি চায় তবে ভবিষ্যতে পুরোহিতের পেশাও গ্রহণ করতে পারে৷’

পৈতে ধারণ করে যারপরনাই খুশি মধুপর্ণা। তার কথায়, “পড়াশোনা ইংরেজিতে হলেও সংস্কৃত মন্ত্রে পুজো করতে পারব৷ শিখে নিতে হবে৷ এই ক’দিন বাড়িতে অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে৷ পুজো হয়েছে৷ হলদি, জল সাঁঝা, পৈতে, যজ্ঞ সবই হয়েছে৷ খুব আনন্দ হয়েছে৷ বন্ধুরা এসেছিল৷ ওদের সঙ্গে আনন্দ করেছি৷”

বাচ্চা মেয়েটির পৈতের যাবতীয় ব্যবস্থা করেছেন সিদ্ধান্ত পরিবারের পুরোহিত সদানন্দ বাগচি৷ তিনি জানান, “ব্রাহ্মণের ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক৷ বৈদিক যুগে নারী ও পুরুষের কোনও ভেদাভেদ ছিল না৷ প্রত্যেকেই ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করার অধিকারী ছিলেন৷ বর্তমানে সমাজের জন্যই হোক কিংবা মুষ্টিমেয় কিছু ব্রাহ্মণের বাধ্যবাধকতা, মহিলাদের উপনয়ন কিংবা ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন, শিক্ষা বন্ধ করে তাঁদের পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে এর আগে মহিলাদের উপনয়ন হয়েছে৷ মালদা তথা উত্তরবঙ্গে সিদ্ধান্ত পরিবারেই প্রথম কোনও মেয়ের উপনয়ন হল৷ যে কোনও কিছু প্রথম কাউকে না কাউকে আরম্ভ করতে হয়৷ সেটা মালদা তথা উত্তরবঙ্গে সিদ্ধান্ত পরিবারই শুরু করল৷”

Sandip Sarkar
Sandip Sarkarhttps://uttarbangasambad.com/
Sandip Sarkar Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 22 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Share post:

Popular

More like this
Related

Kharibari | তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দলেরই পঞ্চায়েত সদস্যদের, বিজেপির মদত, দাবী জেলা সভানেত্রীর   

খড়িবাড়ি: খড়িবাড়ির বিন্নাবাড়িতে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল চরমে। একমাস যেতে...

Dinhata | দিনের আলোয় ডোবা ভরাট! নীরব প্রশাসন

দিনহাটা: গত এক সপ্তাহ ধরে দিনের আলোয় ভরাট করা...

Cooch Behar | সিঁদুর পরার ধরনে বদল! কী বলছেন আধুনিকা নারীরা?

কোচবিহার: আগে ঘরে-বাইরে বিবাহিত মেয়েদের কপালে সিঁদুরের টিপ আর...

Balurghat | পাইপলাইন জোড়ার আঠা দিয়ে কৃষ্ণের মূর্তি

পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: মাটি দিয়ে মূর্তি তৈরির কথা সকলের...