Top News

মমতাকেও ‘কুকথা’, বিজেপি সাংসদ বিধুরির অসংসদীয় মন্তব্যে অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির

নয়াদিল্লিঃ বিধুরি আর বিতর্ক সমার্থক৷ তিনি মুখ খুললেই ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে যায় বলেই মনে করেন বিরোধী শিবির, এমনকি কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতারাও। বিধুরির উগ্র মেজাজ, ফুটন্ত মন্তব্য, কথায়-কথায় মারমুখী আচরণ বারবার বিব্রত, চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে সরকারপক্ষকে। দলের তরফে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও, বিধুরি তাঁর অবস্থান ছেড়ে বেরোননি৷ বর্ষীয়ান বসপা সাংসদ দানিশ আলিকে লোকসভায় চরম ঘৃণ্য ভাষণে বিদ্ধ করে শুধু নিজের দলেই নয়, গোটা দেশের বিরাগভাজন হয়েছেন তিনি৷ বিজেপির তরফে তাঁকে শো কজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তবে এই প্রথম নয়, অতীতেও একাধিক বার চরম অসংসদীয় মন্তব্যের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন বিধুরি। তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সৌগত রায়, কংগ্রেস লোকসভা দলনেতা অধীর চৌধুরী, এমনকি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির উদ্দেশ্যেও কুমন্তব্য করে পূর্বে বহুবার শিরোনামে উঠে এসেছেন দক্ষিণ দিল্লির বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি।

কিন্তু কে এই রমেশ বিধুরি? রমেশ রামরিখ বিধুরির জন্ম ১৯৬১ সালের ১৮ জুলাই, দক্ষিণ দিল্লির সঙ্গমবিহারে এক গুর্জর পরিবারে৷ সমাজসেবী বাবা রামরিখ বিধুরি এবং মা ছত্রোদেবীর পাঁচ সন্তানের চতুর্থ রমেশ বরাবর উদ্ধত ও মারমুখী স্বভাবের জন্য কুখ্যাত। ছোট বেলা থেকেই ‘ব্যাড বয়’ ইমেজ নিয়ে বড় হয়েছেন, পরবর্তীতে দক্ষিণ দিল্লির এই ‘বাহুবলী’। দিল্লির গুরু গোবিন্দ সিং কলেজ থেকে কমার্স গ্রাজুয়েট রমেশ অল্পবয়সে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দিল্লি প্রদেশ বিজেপির সহ সভাপতি পদেও ছিলেন তিনি৷ সংঘ এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভাবধারায় সম্পৃক্ত রমেশ কুস্তিতেও পারদর্শী। অচিরেই বিজেপি নেতাদের, বিশেষ করে অমিত শাহের নেকনজরে পড়েন, যার ফলস্বরূপ তিন তিনবার দক্ষিণ দিল্লির বিধায়ক হন তিনি৷ ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে দক্ষিণ দিল্লি নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে পরপর দুবার জিতে লোকসভাতেও আসেন বিধুরি।

মোদি সরকারের প্রথম পর্বেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের বিরাগভাজন হন বিধুরি৷ লোকসভায় তাঁর অভব্য আচরণের জন্য প্রবল ক্ষুব্ধ হয়েছেন অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, নীতিন গড়করি বা শান্তা কুমারের মতো প্রবীণ নেতারা, যার জেরে ২০১৯ সালে তাঁর টিকিট পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়৷ তিনি এতটাই উদ্ধত যে প্রধানমন্ত্রী বা অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ভাষণের মধ্যেই বার বার হইহট্টগোল জুড়ে দিয়ে বাধা সৃষ্টি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরক্ত হন বিধুরির উগ্র আচরণে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ’র হস্তক্ষেপে এবং দক্ষিণ দিল্লির জাঠ ও গুর্জর সম্প্রদায়ের ভোটব্যাংকের জন্য তাঁকে টিকিট দেয় বিজেপি। ২০১৯ এ দক্ষিণ দিল্লি কেন্দ্র থেকে আপ মুখপাত্র রাঘব চাড্ডাকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার লোকসভায় আসেন বিধুরি৷ এবার আরও দ্বিগুণ হিংস্রতা দেখা যায় চরিত্রে।

সংসদে দাঁড়িয়ে পার্টিলাইন অগ্রাহ্য করে কখনো সনিয়া গান্ধির উদ্দেশ্যে ‘ফিরাঙ্গী’, রাহুলের প্রতি ‘পাপ্পু’ বলে কটাক্ষ করতে শোনা গেছে তাঁকে। এমনকি একবার পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল সরকারের সন্ত্রাস ও হিংসার বিরুদ্ধে দিল্লির বুকে মিছিলে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রীকে ‘ডাইনি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ সংসদে বেছে-বেছে সৌগত রায়ের ভাষণে বাধাসৃষ্টি করেও বিরোধীদের বিষনজরে পড়েছেন বিধুরি। বিবাদে জড়িয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র’র সঙ্গে। একাধিকবার তাঁর নামে কড়া অভিযোগ দায়ের হয়েছে দলের অভ্যন্তরে, কিন্তু অমিত শাহের ‘গুড বুকে’ থাকার জন্য কেউ তার কেশাগ্রস্পর্শও করতে পারেনি। ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময় তার হলফনামায় দেখা গেছে একাধিক ফৌজদারি মামলার তালিকা যেখানে খুন, অপহরণ, রাহাজানি, যৌন নির্যাতনের মতো অপরাধও রয়েছে। দক্ষিণ দিল্লির ‘ত্রাস’, রমেশ বিধুরির দপ্তরে পা রাখতেও ভয় পান সাধারণ মানুষ, তবু এযাবৎ গেরুয়া শিবিরের ছত্রছায়ায় সুরক্ষিত থেকেছেন বিধুরি৷ কিন্তু বৃহস্পতিবারের ঘটনা সব কিছু পিছনে ফেলে দিয়েছে।

সম্প্রতি সংসদের বিশেষ অধিবেশনে পাস হয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্বে বহু চর্চিত এই বিল সংসদে পাস হওয়ায় খুশিতে ডগমগ গেরুয়া শিবির। কিন্তু সেই আনন্দঘন উৎসবের মুখে কার্যত অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক, বর্তমানে দক্ষিণ দিল্লি কেন্দ্রের দুবারের সাংসদ রমেশ বিধুরি। বৃহস্পতিবার রাতে লোকসভায় চন্দ্রযান ৩-এর কৃতিত্ব নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে বহুজন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ দানিশ আলিকে ‘মোল্লা’, ‘দালাল’, ‘সন্ত্রাসবাদী’ ‘কাটওয়া’ বলে অভিহীত করেছেন তিনি৷ স্বয়ং রাজনাথ সিং এই নিয়ে প্রকাশ্যে দু:খপ্রকাশ করতে বাধ্য হন যা বিজেপির পক্ষে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিধুরির চরম অমর্যাদাকর আচরণের জন্য তাকে শো কজ করেছে দল। তাঁর মন্তব্য বাদ দেওয়া হয়েছে লোকসভার কার্য বিবরণী থেকে।

সূত্রের খবর, বিধুরীর আচরণে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বিজেপি শীর্ষ স্তর। দলের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ভাবছে গেরুয়া শিবির। বিধুরির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তামাম বিরোধী শিবির, এমনকি কেন্দ্রীয় শাসক দলও। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক বর্ষীয়ান সাংসদ বলেন, ‘বিষবৃক্ষ লাগানোর ফল পেতে হবে দলকে।’ তিনি এও জানান, ‘গত ১০ বছরে বহু মেহনতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির যে রাজপাট গড়ে উঠেছে সারা দেশে, এইসব  মানুষের (বিধুরি) জন্য এক মুহূর্তে সমস্ত সম্মান ধুলোয় মিশে যায়। এরা দলের শক্র, যারা দলের ভিতরে থেকে দলকে দুর্বল করে তোলে।’ দলের হিতে এই সব আবর্জনা দল থেকে বিদায় করা জরুরি বলেও জানান তিনি। দেখার বিষয় রমেশ বিধুরির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয় বিজেপি।

Sandip Sarkar

Sandip Sarkar Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 22 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Recent Posts

J P Nadda | ‘দিদির পশ্চিমবঙ্গ মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়’, চোপড়ার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে পোস্ট নাড্ডার

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ সালিশি সভার নামে তালিবানি অত্যাচারের ঘটনা ঘটল উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায়! বিবাহবহির্ভূত…

15 mins ago

১। Bone Cancer | হাড়ের ক্যানসার হলে কী কী লক্ষণ দেখে চিনবেন? উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল…

19 mins ago

Chopra | বাংলায় ‘তালিবানি’ শাসন! যুগলকে মারধরে অভিযুক্ত জেসিবির পরিচয় কী জানেন?

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: এক লহমায় দেখলে বাংলাকে তালিবান শাসিত আফগানিস্তান বলে ভুল হতে বাধ্য।…

27 mins ago

France | ফ্রান্সে ম্যাক্রোঁর ভরাডুবি! প্রথম দফার সংসদীয় নির্বাচনে এগিয়ে কট্টর ডানপন্থীরা

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: গত ৩০ জুন ফ্রান্সে (France) অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম দফার সংসদীয় নির্বাচন…

29 mins ago

LPG Price Cut | মাসের শুরুতেই কমল বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম, সিলিন্ডার পিছু কত পড়বে?

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মাসের শুরুতে অনেকটাই সস্তা হল বাণিজ্যিক রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম (LPG…

30 mins ago

Hurricane Beryl | বেরিলের প্রভাব বার্বাডোজে, রোহিতদের ফেরাতে ব্যক্তিগত বিমান পাঠাবেন জয় শা

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ক্রমশ ধেয়ে আসছে হারিকেন ‘বেরিল’। ঘণ্টায় ১৭৯ কিলোমিটার বেগে বার্বাডোজে আছড়ে…

49 mins ago

This website uses cookies.