উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যের পুর পরিষেবা নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী (Bengal CM) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার রাজ্যের প্রায় সব পুরসভার (Municipal Corporation) পুরপিতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন মমতা। বৈঠকের শুরুতেই তিনি পুর পরিষেবা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। টাকা নিয়েও পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলেন।
বৈঠকে মমতা বলেন-
- পুরসভা এবং পঞ্চায়েত কিন্তু মানুষকে পরিষেবাটা দেয়। আমি বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি, দখল হলেও কোনও অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে না? কেউ টাকা খাওয়াচ্ছে, কেউ টাকা খাচ্ছে। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছে রাজ্যের আইডেন্টিটিটা এটাতে নষ্ট হচ্ছে। মানুষ যদি উন্নয়নের কাজ না পায় তাহলে সেই পুরসভা বা পঞ্চায়েত রাখার দরকার কী!
- হাওড়ায় প্রচুর বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। রথীন যখন চেয়ারম্যান ছিল, হাওড়াটাকে ১২টা বাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স যাওয়ার জায়গা নেই। নো অ্যাকশন। কারণ প্ল্যান পাশ করার জন্য মানুষকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অনলাইনে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। তাতেও কাজ হয়নি। আমি চাইনা কাউকে হেনস্তা হতে হোক। কিন্তু একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। খালি জায়গা দেখলেই লোক বসিয়ে দিচ্ছে।
- বালির এসডিও অমৃতা কী করছেন, কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিজেরা টেন্ডার দিচ্ছেন, কার থেকে কতটা খাচ্ছেন জানি না। কে খাচ্ছেন, কে খাচ্ছেন না জানি না। নিশ্চয় দিয়েই খাচ্ছেন। আমি এই কথাগুলো বলার জন্য মোটেই খুশি নেই, আমি দুঃখিত।
- কোথাও কোথায়ও আলো জ্বলতেই থাকে, কোথাও জল বন্ধ করা হয় না। রাস্তা সারানো হয় না। একটা ঢাকনা করলেও কেউ খুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
- হাতিবাগান, গড়িয়াহাটের অবস্থা খারাপ। ওয়েবেলের কাছে দেখলাম কত দোকান বসেছে, সবাই আউটসাইডার। নোংরা করে রেখে দিয়েছে। কেন নতুন একটা জোন করা হচ্ছে না? বেআইনিভাবে চারতলা-পাঁচ তলা তোলা হচ্ছে, কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। দু-একজনকে গ্রেপ্তার করুন, দু-একটা নির্মাণ ভাঙুন। আমার বাড়ি থেকে শুরু করুন। কেন বেআইনি কোনও জিনিস আমরা মানব।
- পানীয় জল সরবরাহের প্রশ্নে রাজ্যের সবচেয়ে খারাপ পাঁচ পুরসভার মধ্যে শিলিগুড়িকে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি শিলিগুড়ি ও লাগোয়া ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
- কারও কারও অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, আইসি হলে যতটা পারি ইনকাম করে নিই, এসডিও হলে একটা সঞ্চয় করে নিই, ডিএ হলে সঞ্চয় করে নেব- এগুলো অনেক হয়েছে, আর করবেন না প্লিজ, এবার বড্ড চোখে লাগছে।
- সুজিত বসু লোক বসাচ্ছেন কম্পিটিশন করে-হোয়াই হোয়াই…। সল্টলেক-রাজার হাট চত্বর নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ মমতার।
- আজ থেকে লোকালি কোনও টেন্ডার করতে দেব না, সব কেন্দ্রীয়ভাবে হবে। এর জন্য আমি কমিটি তৈরি করে দিচ্ছে। কমিটিতে থাকবেন- মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, অর্থ সচিব, সেচ দপ্তরের সচিব, সিপি, ডিজি, এডিজি আইন-শৃঙ্খলা।
- আর্বান ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি…কী কাজ তাঁর! কতকগুলো বোর্ড রেখে দিয়েছে। দপ্তরটা রাখার দরকার কী। ৪০০-৫০০ লোক রেখেছে। দিঘা উন্নয়ন অথরিটির আর কোনও প্রয়োজন আছে কি? বিরাট বাড়িতে ৪০০-৫০০ লোক, কারও গা টিপছে, কারও পা টিপছে। আরাম করছে। তাঁদের যেখানে সরকারি কর্মী নেই, সেখানে কাজে লাগিয়ে দাও। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদও তাই। পুরসভা আছে তো কাজ করার জন্য।
-
অফিসাররা ভাবছে, আমি ২ বছর থাকব কোনও রকমে কাটিয়ে দেব। তা হয় না। আপনার পিরিয়ডটা রিভিউ করা হবে। এবার থেকে রিভিউ কমিটি তৈরি করা হবে। স্বচ্ছতা রেখেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।