উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ স্পেন সফরে রয়েছেন বাংলার প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পেন সফরের শুরুতেই মাদ্রিদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন মমতা। রাজ্যের ফুটবলের মান উন্নয়নে স্বাক্ষরিত হয় বেশ কিছু মউ। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে রবিবার সদলবলে আসেন বার্সেলোনায়। বাংলায় লগ্নি টানতে সেখানে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেছেন মমতা। উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েক। মমতার আশা, মাদ্রিদের মতো বার্সেলোনা সফরেও বাংলার জন্য বিনিয়োগ টানতে তিনি সক্ষম হবেন।
বুধবার মাদ্রিদের মাটিতে পা রেখেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সফরে তাঁর নজর রয়েছে ক্রীড়া থেকে শিল্পক্ষেত্র, ভাষা থেকে শিক্ষা সব কিছুতেই। করে ফেলেছেন একাধিক মৌ সাক্ষর। রবিবার মাদ্রিদ থেকে বার্সেলোনা পৌঁছনোর পর সেখানকার এল প্যালেস হোটেলে প্রবাসীদের সঙ্গে মিলিত হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সঙ্গে বার্সেলোনা এসেছেন স্পেনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েক এবং তাঁর স্ত্রীও। এদিনের অনুষ্ঠানের শুরুতেই এক শিল্পী মমতাকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করেন। যা শুনে করতালিতে ফেটে পড়ে গোটা হল। হেসে ফেলেন মমতাও। যদিও শিল্পী সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে শুধরে নিয়ে ‘মুখ্যমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করেন। বার্সেলোনার এই অনুষ্ঠানেও পৌরহিত্য করেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন শিল্প সচিব বন্দনা যাদব।
এদিন প্রবাসী ভারতীয়দের সামনে ভারতীয় সংস্কৃতি, ভাষা বৈচিত্র নিয়ে বক্তব্য রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের সভায় উপস্থিত প্রবাসী ভারতীয়রা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের বংশোদ্ভূত। ভারতীয় ভাষাবৈচিত্র নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দক্ষিণ ভারতের মানুষ তো হিন্দি বলতেই পারেন না। কিন্তু তবু তাঁরা কত স্মার্ট। আবার বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের ভাষার মধ্যে মিল রয়েছে। বাংলাতেও এক এক জেলায়, এক এক রকম টানে মানুষ কথা বলেন। এই সবটা মিলিয়েই তো দেশ।’’
পাশাপাশি রাজ্যের কথাও এদিন তুলে ধরেন মমতা। বিশেষ করে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পগুলির কথা উল্লেখ করেন। মমতা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘এখন আমাদের রাজ্যে কন্যাসন্তানদের কোনও চিন্তা নেই। রয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্প। মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভান্ডার।’’তবে এদিন তিনি তাঁর বক্তৃতায় সেভাবে প্রাধান্য দেননি রাজনীতিকে। প্রবাসীদের এই অনুষ্ঠানে বাংলায় বিনিয়োগের আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে দুর্গাপুজো দেখার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন মমতা। এদিকে শিল্প বৈঠকের আগেই গতকাল কলকাতায় লগ্নির ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এক প্রবাসী ভারতীয়। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কারখানা গড়তে চান তিনি।
রবিবার মাদ্রিদ থেকে ট্রেনেই বার্সেলোনায় পৌঁছান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই সফরে সঙ্গী হন স্পেনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েকও। এর আগে মাদ্রিদে মমতার বিভিন্ন বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন দীনেশ। এর আগে মাদ্রিদ থেকে বার্সেলোনা যাওয়ার সময় মমতাকে ট্রেনে ফার্স্ট ক্লাস কামরায় চেপে ভ্রমণের জন্য অনুরোধ করেছিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েক। তবে মমতা সেই অনুরোধ রাখেননি। সাধারণ মানুষের মতোই তিনি ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণিতে চেপে বিকেল নাগাদ বার্সেলোনায় এসে পৌঁছান মমতা।
জানা গিয়েছে, মমতার জন্য মাদ্রিদ থেকে বার্সেলোনায় সফরের জন্য সুপারফাস্ট ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাসের টিকিটই কাটা হয়েছিল। তবে মুখ্যমন্ত্রী ফার্স্ট ক্লাসে চড়তে অস্বীকার করেন। আম জনতার মতো তিনি দ্বিতীয় শ্রেণির চেয়ার কারে বসেই বার্সায় পৌঁছান। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্পেনে যাওয়া শিল্পপতীরা ফার্স্ট ক্লাসেই চাপেন। এমনকী ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েক এবং তাঁর স্ত্রীও ফার্স্ট ক্লাসে চেপেই বার্সেলোনায় পৌঁছান।