আজাদ, মানিকচক: তৃণমূল নেতা বাবলা সরকারকে গুলি করে খুন করার মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে মানিকচকের (Manikchak) চণ্ডীপুরের নাকা চেকিং পয়েন্টে দুজন দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলে মানিকচক থানার পুলিশ। এই ঘটনা প্রমাণ করে দুষ্কৃতীমূলক কর্মকাণ্ডের পর গা ঢাকা দিতে মানিকচক রুটকে নিরাপদ বলে বেছে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের অবাধ যাতায়াতে মাধ্যম মানিকচকের জলপথ। তবে খুনকাণ্ডের দিনই মানিকচক সহ মালদার বিভিন্ন এলাকায় নাকা চেকিং চললেও তারপর থেকে আবারও সেই ঢিলেঢালা পরিস্থিতি। হত্যাকাণ্ডের পরদিন থেকেই তল্লাশিতে বাড়তি কোনও ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।
মানিকচকের জলমাধ্যম ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের অবাধ যাতায়াত বলে দাবি উঠছিল বিভিন্ন মহলে। মানিকচকের জলপথই হল বেআইনি অস্ত্র প্রচারের নিরাপদ রুট। তাছাড়া মালদা সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে দুষ্কৃতীমূলক কর্মকাণ্ডের পর ঝাড়খণ্ডে গা ঢাকা দিতে মানিকচকের জলপথ বেছে নেয় দুষ্কৃতীরা বলে অভিযোগ। মাত্র কয়েক মাস আগে দিনের বেলায় মানিকচকের ধরমপুর বাজারে গুলি ও বোমা মেরে খুন করা হয় কংগ্রেস নেতা মহম্মদ সাইফুদ্দিনকে। সেই হত্যাকাণ্ডেও ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। মানিকচকের নদীপথ ধরেই দুষ্কৃতীরা এসে কংগ্রেস নেতাকে খুন করেন এবং আবারও সেই পথেই ঝাড়খণ্ডে ফিরে যান বলে দাবি ওঠে। দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে বারবার ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। তবে কংগ্রেস নেতা মহম্মদ সাইফুদ্দিনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকেই এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি মানিকচক থানার পুলিশ।
যেখানে আশঙ্কা? মানিকচকের একটা বড় অংশ জুড়ে উন্মুক্ত গঙ্গা। নদী পেরোলেই ঝাড়খণ্ড। নৌকা ও লঞ্চের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনে হাজার হাজার নিত্যযাত্রীদের প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হয়। বাবলা হত্যাকাণ্ডের পর দুষ্কৃতীরা মানিকচকের জলপথকে ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে গা ঢাকা দিতে পারে এমনও দাবি সামনে আসছে। কিন্তু মানিকচক ঘাট চত্বর এলাকায় পুলিশি তল্লাশি চললেও মানিকচক ও ভূতনিজুড়ে অনেকগুলি ঘাটে নেই কোনও পুলিশি নজরদারি।
মানিকচক ঘাট হল বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের আন্তরাজ্য সীমান্ত। তবে শুধু ঝাড়খণ্ড নয়, বিহার ও বাংলার বহু মানুষ প্রতিদিন নৌকা ও লঞ্চে যাতায়াত করে। থানার তরফে মানিকচক ঘাটে নজরদারির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরাও। মালদায় তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় ঝাড়খণ্ড যোগ সামনে এলেও কোনও বাড়তি ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না মানিকচক ঘাটে। উদাসীন পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জীব মণ্ডলের দাবি, ‘ঝাড়খণ্ড থেকে আসা যাত্রীদের মালপত্রে সবসময় যাচাই করে দেখা হয় না। পণ্যবাহী লরিতেও তল্লাশি করা হয় না।’
মানিকচকঘাট বাদেও ভূতনির গদাইঘাট, শুখসেনাঘাট সহ কিছু ঘাট ব্যবহার করে ভুতনি ব্রিজের মাধ্যমে অনায়াসে মানিকচকে ঢুকে পড়তে পারে ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীরা।
ভুতনি ব্রিজের দুই প্রান্তে নাকা চেকিং পয়েন্ট থাকলেও তা নামমাত্র। মানিকচকঘাটে পুলিশি নজরদারি থাকলেও আর কোথাও সেই ব্যবস্থা নেই। ফলে নদীপথ ব্যবহার করে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা।
বিজেপির দক্ষিণ মালদার সাধারণ সম্পাদক গৌড় মণ্ডল ও সিপিএম নেতা শ্যামল বসাকের দাবি, মানিকচক রুট ব্যবহার করে মালদা জুড়ে দুষ্কৃতীদের অবাধ বিচরণ। বাবলা সরকারের মতো হেভিওয়েট শাসকদলের নেতাকে প্রকাশ্যে এভাবে খুন করা হলে আমরা কেউই নিরাপদ নই।