রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

সংঘাতই যেন ভবিতব্য

শেষ আপডেট:

ন যযৌ ন তস্থৌ! অমিত শা’র কড়া পদক্ষেপেও কাজ হয়নি। বরং বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো হয়ে আছে মণিপুর। সড়ক যোগাযোগ কিংবা জীবনযাত্রায় অচলাবস্থা রয়েই গিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ নেই। আলোচনার মাধ্যমে জট কাটানোর পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হয়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উচ্চপদস্থ কর্তারা কুকি-জো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পরপর দু’দিন বৈঠক করে ফেললেন। কিন্তু সমস্যার তিলমাত্র সমাধান হয়নি।

মূল দাবি ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয় কুকি-জো নেতৃবৃন্দ। সেই দাবিটি হল, মণিপুরের কুকি অধ্যুষিত অঞ্চলে পৃথক প্রশাসন কায়েম। সেই প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আপত্তি নেই। কিন্তু রাজ্যের বর্তমান প্রশাসনে একেবারেই আস্থা নেই কুকি-জো জনগোষ্ঠীর। যার ফলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৮ মার্চ থেকে মণিপুরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষত কুকি অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে দেয়নি সেখানকার সাধারণ মানুষই।

কিছু পণ্য পরিবহণ হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু মণিপুরের সাধারণ মানুষের রাজ্যের মধ্যে নির্বিঘ্নে চলাচলের উপায় নেই। সরকারি ফতোয়া চাপিয়ে দিলেই যে জাতিগত বিরোধের মীমাংসা হয় না, মণিপুর তার আরেকটি জ্বলন্ত প্রমাণ। মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর হিংসাত্মক সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে অনেকদিন। মণিপুরের প্রশাসন মেইতেইদের প্রতি পক্ষপাতপূর্ণ বলে কুকিদের অভিযোগ। ফলে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার মুডেই নেই কুকি-জো জনগোষ্ঠী। বরং সংঘাতের মুড অনেক বেশি স্পষ্ট।

দীর্ঘকাল পাশাপাশি বসবাস করলেও মেইতেই ও কুকিদের বৈরিতা এখন চরমে। আলাদা রাজ্য দাবি না করলেও কুকিরা আর মেইতেইদের সঙ্গে একই প্রশাসনের অধীনে থাকতে নারাজ। এই বৈরিতার পিছনে ধর্মীয় উপাদান আছে বটে। কিন্তু জাতিগত শত্রুতা প্রধান হয়ে উঠেছে। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের ইস্তফা ও রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে এই ভয়ংকর সমস্যার সমাধান করা যায়নি।

ধর্মীয় ও জাতিগত সংঘাত প্রধান হয়ে উঠলে পরিস্থিতি যেমন হয়, মণিপুরে এখন ঠিক তাই চলছে। কোনও অবস্থাতেই সহাবস্থানের মানসিকতা আর নেই। দমনপীড়ন বা বলপ্রয়োগে সেই মানসিকতা বদল অসম্ভব। আলাদা প্রশাসনের দাবি থেকে কুকি-জো সম্প্রদায়কে সরাতে হলে শুধু নিয়মতান্ত্রিক বৈঠক ফলপ্রসূ হবে না। দরকার সহৃদয় আলোচনা। যাতে ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে মণিপুরের সমস্ত গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ জরুরি। এরকম একটি কাজ সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে ঘটেছে।

পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার কাছে গীধগ্রামে প্রায় ৩০০ বছরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এলাকার শিব মন্দিরে পুজোর অধিকার চেয়েছিলেন দলিতরা। তাঁরা হিন্দু। কিন্তু উচ্চবর্ণের লোকেদের সেই অধিকার দেওয়ায় ঘোর আপত্তি ছিল। শেষপর্যন্ত সংযতভাবে প্রশাসনের দু’পক্ষের সঙ্গে বারবার আলোচনায় জট কেটেছে। রাজনৈতিক ভূমিকাও ছিল সদর্থক। ফলে ওই মন্দিরে দলিতদের পুজোর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি গ্রামে সীমাবদ্ধ এই ঘটনাটি যে কোনও বৈরিতার সমাধানে মডেল হতে পারে।

অন্যথায় কতটা ভয়ংকর অবস্থা অপেক্ষা করে থাকতে পারে, হাতের কাছে তার বেশ কয়েকটি উদাহরণ মজুত। যেমন জাতিগত সংঘাতে পাকিস্তানে একটি ট্রেনের যাত্রীদের পণবন্দি করেছে বালুচ বিদ্রোহীরা। ওই ঘটনায় শামিল বিদ্রোহী ৩৩ জনকে পাক সেনা মেরে ফেলতে পারলেও সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু ঠেকানো যায়নি। ২১ জন ট্রেনযাত্রী ও কয়েকজন সেনা জওয়ানকে নিকেশ করেছে বালুচ জঙ্গি দল।

হিন্দু-মুসলমান ধর্মীয় বিরোধে আবার বাংলাদেশে খুন, মারামারি, ধর্ষণ, মন্দিরে হামলা ইত্যাদি হল বেশ কয়েকদিন। তীব্রতা কিছুটা কমলেও হিংসার বীজ বাংলাদেশে রয়েই গিয়েছে। বালুচিস্তান কিংবা বাংলাদেশে এই সমস্যায় নতুন করে বিস্ফোরণ অসম্ভব নয়। মণিপুরেও তাই। দোলপূর্ণিমার আগে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠী যেমন প্রয়োজনে সংঘাতে প্রস্তুত, তেমনই যিশুর শান্তির বাণী উপেক্ষা করে ধর্মে খ্রিস্টান কুকিরা হিংসার পথে পা বাড়িয়েই আছে।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

বঙ্গে বিপন্ন সম্প্রীতি

রাজ্যটির নাম কি পশ্চিমবঙ্গ? বিভ্রম জাগে। বিদ্বেষের বিষে যে...

ভুয়ো উচ্ছেদে মমতা

বামফ্রন্ট জমানায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলে রাখতে ভোটে সিপিএমের কারচুপি...

মার্কিন আত্মকেন্দ্রিকতা

‘আমেরিকাকে ফের এক নম্বর’ করতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড...

ওডিশায় চেনা খেলা

নেহরু-গান্ধি পরিবার বাদে দেশের বাকি সব মনীষীকে আঁকড়ে ধরার...