জলপাইগুড়ি: সারারাত দু’চোখের পাতা এক হয়নি। তবু সোমবার সকালে নিজের বাড়ির ধ্বংসস্তূপে আঁতিপাঁতি করে কাগজপত্র খুঁজছিলেন সত্তরোর্ধ্ব নীরুবালা রায়। প্রতিবেশী শিবু রায়ও ঠিক একইভাবে ঘরের ভাঙাচোরা জিনিসপত্র সরাচ্ছিলেন। কবে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফের ঘর তৈরি হবে তা ওঁরা কেউ জানেন না। ময়নাগুড়ির (Maynaguri) বার্নিশ পঞ্চায়েতের কালীবাড়ি এলাকার নীরুবালা, শিবু বা গোপাল রায়রা মরিয়া হয়ে তাই ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র খুঁজছেন। নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র সমেত ফাইল কি ঝড়ে উড়ে গেল? এই সংশয়েই সোমবার দিনটা কেটে গেল নীরুবালাদের।
বার্নিশের কালীবাড়ি, ঘাটপাড়া, বসুনিয়াপাড়া, সর্দারপাড়া, ফুলতলির মতো সাতটি গ্রামের ভোটার রয়েছেন হাজারের কাছাকাছি। এঁরা সকলেই ভোট দেন পার্শ্ববর্তী ফুলতলি স্কুলের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। আগামী ১৯ তারিখ জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) লোকসভা আসনে নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) দিন ভোটার কার্ড (Voter Card) না থাকলে ভোট দেবেন কী করে? এটাও এখন তাঁদের চিন্তা।
যদিও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বার্নিশের বাসিন্দাদের ভোটার কার্ড না থাকলেও ভোট দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে বলে জেলা নির্বাচন দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
গোপাল রায়ের বাড়ি বলে আর কিছুই নেই। বাঁশ ঠেকা দিয়ে ত্রিপলের তাঁবুতে স্বপরিবারে বসবাস করছেন ঝড়ের তাণ্ডবের পর। কোথায় ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ছিল, সেই ফাইল ঝড়ে কোথায় উড়ে গিয়েছে, খুঁজেই পাচ্ছেন না। নিজের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের নাম জানা থাকলেও কোন পার্টের বাসিন্দা, সিরিয়াল নম্বর কিছুই জানা নেই।
নীরুবালা রায়ের অবস্থা আরও সঙ্গিন। ভোটার কার্ডের পাশাপাশি বাড়ির দলিলের নথিও খুঁজে পাচ্ছেন না। ১৯ তারিখ কীভাবে ভোট দেবেন কার্ড খুঁজে না পেলে, সেই চিন্তার পাশপাশি সিএএ নিয়েও আশঙ্কার মেঘ জমেছে মনে।
ময়নাগুড়ির বিডিও প্রসেনজিৎ কুণ্ডু জানান, এখন ব্লক প্রশাসন ত্রাণ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে খাবার ও ত্রিপল দিয়ে থাকার অস্থায়ী ব্যবস্থা করতেই ব্যস্ত। শেলটার হোম থেকে সকলে বাড়ি ফিরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেছেন। কেউ কিছু খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করলে অবশ্যই দেখা হবে।
জেলা শাসক ও জেলা নির্বাচন আধিকারিক শামা পারভিন জানান, ভোটার কার্ডের বিকল্প হিসেবে আধার, প্যান, ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড, ব্যাংকের ছবি সহ পাসবুক, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট নিয়ে এলেও ভোট দিতে পারবেন। তাছাড়া যাঁদের ভোটার কার্ড খোয়া গিয়েছে তাঁদের ভোটার ইনফরমেশন স্লিপ দেওয়া হবে।