অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি : বহুদিনের প্রশ্ন। উত্তরটা তিনি। তাঁকে দেখেই যুগ যুগ ধরে আমাদের মধ্যে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা সমস্যাটি পিঠটান দিতে পারে। অনায়াসে। মকবুল হুসেন ময়নাগুড়ি টেকাটুলি কালীরহাট মোড় লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দা। পেশা চাষবাস। খুব সাধারণ মানুষ। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে অসাধারণ বলেই তাঁকে নিয়ে আস্ত এক প্রতিবেদন।
ময়নাগুড়ি ফুটবল ময়দানের সর্বজনীন দুর্গাপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে তিনি। এই পুজোর যাবতীয় আয়োজনে বলতে গেলে মকবুলই একমেবাদ্বিতীয়ম। বেলতলায় গোবর লেপে সাফ, পুজোর জন্য পদ্ম, দূর্বা সহ অন্যান্য উপকরণ নিয়ে আসা, পুজোর ঘট ধোয়া, সবেতেই তিনি। এক-দু’বার নয়, মকবুল এই পুজোর সঙ্গে প্রায় ৩০ বছর ধরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। মুসলিম হয়ে মায়ের পুজোয় এভাবে যুক্ত হওয়া? মানুষটি অকপট, ‘আমার কাছে আল্লা আর ভগবানে কোনও তফাত নেই। সবই সমান। আমরা সবাই সেই পরম শক্তিরই সন্তান।’
এখন বয়স ৪৫। বয়স যখন ১৫-১৬, মকবুল সেই সময় এই পুজোর কাজে এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁর ঘর থেকে পুজোমণ্ডপটি প্রায় আট কিলোমিটার দূরত্বে। পুজোর সময় এলেই সেই দূরত্ব কিন্তু বেমালুম উধাও। ঝড় হোক, জল হোক বা চাঁদিফাটা রোদ্দুর, সবকিছু শিকেয় তুলে এই সময়টা কিন্তু মকবুলের মণ্ডপে হানা দেওয়া চাই-ই চাই। প্রতিবারের মতো এবারেও তিনি ইতিমধ্যেই মন্দির পরিষ্কার করা, বেলতলার আগাছা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছেন। এই বেলতলাতেই মায়ের বোধন হয়। পুজোর সময় গোটা মন্দির চত্বর মকবুল নিজের হাতেই পরিষ্কার করেন। পুজোয় পুরোহিতকে সর্বতোভাবে সাহায্যের দায়িত্ব তাঁরই কাঁধে। পুজোর সমস্ত সামগ্রী জোগাড়, নবপত্রিকাকে স্নান। পুজো যতই এগিয়ে আসে মানুষটির দায়িত্বের পাল্লাটা ততই ভারী হতে শুরু করে। বলির চালকুমড়ো হোক বা পুজোর পায়েসের জন্য গোরুর দুধ, মকবুল সব নিজের বাড়ি থেকেই নিয়েই আসেন। তাঁর বাড়ির গোরুর দুধেই এই মন্দিরে অষ্টমীর পুজো।
ফুটবল ময়দান দুর্গাবাড়ির পুজো ময়নাগুড়ি শহরের সব থেকে প্রাচীন পুজো। এবারে এই পুজোর ১৩৩তম বছর। ফুটবল ময়দানের এক কোণে দুর্গার স্থায়ী ঠাকুরদালান। পাশেই বেলতলা। এখানেই প্রতি বছর উমার আরাধনা হয়। এই পুজোয় জাঁকজমক নেই, কিন্তু নিষ্ঠা ভরপুর। আর? পুজো কমিটির সম্পাদক ঝুলন দে’র কথায়, ‘দুর্গাপুজোকে আমরা সর্বজনীন বলি। কিন্তু শব্দটির আক্ষরিক অর্থ আমরা ক’জনায় জানি? মকবুলকে দেখলেই কিন্তু এর মানে বোঝাটা খুব সহজ।’
মাথা নেড়ে সায় দেন এই পুজোর পুরোহিত নাড়ু চক্রবর্তী, ‘মায়ের কাছে সবাই সমান। কোনও ভেদাভেদ নেই।’ ময়নাগুড়ি দুর্গাবাড়ির নাটমন্দিরে খড়ের ওপর একমেটে দোমেটে করে উমা ফুটে উঠছেন। সেদিকে ঠায় তাকিয়ে থাকতে থাকতে মকবুল বলে ওঠেন, ‘খোদা আর মায়ের মধ্যে কোনও পার্থক্যই নেই। তবুও আমরা কেন নিজেদের মধ্যে মারামারিতে ব্যস্ত?’ কেউ যে তাঁর এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন না সেটা মকবুল ভালোমতোই জানেন। আর তাই আরও বেশি করে পুজোর আয়োজনে ডুব দেন।
নিরঞ্জনপর্বে মায়ের বিদায়। এই ক’টা দিন ধরে মাকে রীতিমতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা মকবুলের চোখ এই সময়টায় জল টলটল। বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠেন, ‘আবার এসো মা, ভালো থেকো আর সব্বাইকে ভালো রেখো!’
রায়গঞ্জঃ এক তরুণীকে অপহরণ করে অন্যত্র লুকিয়ে রাখার অভিযোগে মূল অভিযুক্তের কাকাকে গ্রেপ্তার করল রায়গঞ্জ…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছিলেন স্বামী। সেই মেসেজ খুলতেই স্ত্রী শুনতে পেলেন…
মানিকচকঃ একেই কি বলে প্রেমের ফাঁদ? তিন বছরের প্রেম। বছরখানেক আগে বাড়ির মতে অন্যত্র বিয়ে…
রায়গঞ্জ: বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ১০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতির এক খোঁচায় সরকারি প্যানেল বাতিল…
প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: নাগাল্যান্ড থেকে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন (New Alipurduar Station) পর্যন্ত ওই ইয়াবা ট্যাবলেট…
শিলচর: মাতৃভাষা বাংলার অধিকার রক্ষার আন্দোলনে (Language Movement) ১৯৬১ সালের ১৯ মে শহিদ ১১ জন…
This website uses cookies.