খোকন সাহা, বাগডোগরা: উদ্বেগ বাড়ছে মাটিগাড়ায় (Matigara)। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে নিত্যনতুন মুখের আনাগোনা। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, বাংলাদেশের (Bangladesh) অস্থির পরিস্থিতির পর অনেকেই এই এলাকায় এসে নদীর চরের জমি কিনছেন। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশই মোটা টাকার বিনিময়ে তাদের জমি পাইয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এসেছে গোয়েন্দাদেরও। সূত্রের খবর, মাটিগাড়ার একাধিক এলাকায় রোহিঙ্গারা ঘাঁটি গাড়ছে বলেও অভিযোগ এসেছে গোয়েন্দাদের কাছে।
এক গোয়েন্দাকর্তা বলছেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রবেশ সংক্রান্ত খবর আমরাও পেয়েছি। বিষয়টিতে নজর রাখা হচ্ছে। আমরা রিপোর্ট তৈরি করছি।’ যদিও পুলিশের কেউ এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের এসিপি (ওয়েস্ট) দেবাশিস বসুকে ফোনে ধরা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘এমন কোনও খবর এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই।’
যত কাণ্ড মাটিগাড়াতেই। মুখ্যমন্ত্রী সরকারি জমি দখল এবং বালি-পাথরের কারবার বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর হতে নির্দেশ দিলেও অবাধে চলছে কারবার। সম্প্রতি বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে নদীর চর বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও কারও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। বিডিও বিশ্বজিৎ দাস অবশ্য বলছেন, ‘ওখানে এমন হয়েছে বলে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’
দীর্ঘদিন ধরে মাটিগাড়ায় নদীর চর দখল করে রেখে বিক্রির একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আগে ও পরে বেশ কিছু পরিবার মাটিগাড়ায় এসে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কাছে চড়া দরে চর বিক্রি করা হয়েছে। তুলসীনগর, শিমুলতলা, লেনিন কলোনি, টাকলুবস্তি সহ গোটা চরটাই দখল হয়ে গিয়েছে। বালাসন সেতুর দক্ষিণে লেনিন কলোনিতে বেশ কিছু পরিবার বাঁশ, পলিথিন দিয়ে ছাউনি বানিয়ে বসবাস করছে।
এলাকটি মাটিগাড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। লেনিন কলোনির পঞ্চায়েত সদস্য ম্যাগডালিন দাস বলছেন, ‘এখানে বেশ কিছু বাইরের লোকজন এসে বসেছে। এদের মধ্যে কিছু যাযাবরও আছে। শুনেছি, স্থানীয় এক নেতা টাকা নিয়ে ওদের বসিয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ধীরেন পালও এ নিয়ে একমত। তাঁর কথায়, ‘বাইরের লোকজন এসে এখানে বসবাস করছে। এক নেতাই এখানে এনে বসাচ্ছে।’ যারা নতুন এসেছে এলাকায়, তাদের অনেকেরই ভাষা বোধগম্য হচ্ছে না স্থানীয়দের।
বালাসনের চরে কথা হচ্ছিল এক ব্যক্তির সঙ্গে। প্রথমে প্রশ্ন করায় উত্তর দিতে চাইছিলেন না। পরে জানালেন, তাঁরা উত্তরপ্রদেশ থেকে এসেছেন। কতদিন হল? এই প্রশ্নের উত্তরেও নীরব রইলেন তিনি।
এলাকাটিতে ৪০টির মতো অস্থায়ী বসতি গড়ে উঠেছে। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মন বলছেন, ‘এর আগেও মাটিগাড়ার হিমাঞ্চল বিহার থেকে এমন খবর পেয়েছি। আসলে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাচ্ছেন। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া।’ তাঁর অভিযোগ, বালাসনের চর দখল করে বিক্রি করা, বাইরের লোক এনে বসানো, জাল নথিপত্র তৈরি করে দিচ্ছে শাসকদলের নেতাদেরই একাংশ।
যদিও এমন অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূলের মাটিগাড়া অঞ্চল সভাপতি ব্রজকান্ত বর্মন। তাঁর পালটা দাবি, ‘আমাদের দলের কেউ এসবে জড়িত নয়। কিছু সুবিধাবাদী এসব অবৈধ কারবার করে, নাম হয় তৃণমূলের।’ তবে, তিনিও মেনে নিচ্ছেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি কিছু বাড়িঘর হয়েছে। অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না। সে যে দলেরই হোক।’
স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা মাটিগাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ভোলা ঘোষের বক্তব্য, ‘সরকারি জমি দখল হয়ে থাকলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’