গ্রাফিক্স: কৃশাণু ভট্টাচার্য
অর্চন মুখোপাধ্যায়
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, জনসংযোগের একটা বিশাল মাধ্যম হয়ে উঠেছে মিম। বিনোদনজগৎ থেকে বিজ্ঞাপন, পড়াশোনা থেকে সাহিত্যচর্চা, সবেতেই এর অবাধ আসা-যাওয়া শুরু হয়েছে। একটা আপাত-দুরূহ কনসেপ্ট অনায়াসে মিমের মাধ্যমে বোঝা যায়। ব্যক্তিসমাজের সবচেয়ে সুপ্রাপ্য এলিমেন্টের ওপর ভিত্তি করে, সেটার মাধ্যমে একটা ভিন্নবার্তা প্রেরণই এই মিমের কাজ, যা সাধারণত করা হয় হাস্যরসের সাহায্যে। আর এই ধারাটা প্রবলতর হয়েছে এই ডিজিটালিকরণের জন্য, নানা ব্যক্তি নিজেদের স্বকীয়তা দেখিয়ে যাচ্ছে মিমের মাধ্যমে।
মিম কথাটা নিয়ে সামান্য নাড়াঘাঁটা করলে এর একটা অপ্রত্যাশিত উৎস পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যদর্শন রীতিতে একটা শব্দ আছে : মাইমেসিস। যার গোদা বাংলায় অর্থ অনুকরণ। মানে, একটা কিছু দেখে সেটাকে, বা সেটার একটা বা একাধিক বৈশিষ্ট্যকে ফুটিয়ে তোলা; আরও ভালোভাবে বললে, একটা প্রচলিত ধারণার আদলে, বা সেই ধারণার রূপে আরেকটা ধারণার নির্মাণ।
একটা ছবি, আর সঙ্গে একটা বাক্য: মোটামুটি মিম এমনই দেখতে। ছবি বা চিত্রের মাধ্যমে গণমাধ্যমে ভাবপ্রকাশ করা অনেকদিনের রীতি। লেখালেখিরও আগে থেকে আমরা আলতামিরার গুহাচিত্র কিংবা মিশরীয় চিত্রলিপি দেখে আসছি। তা বলে কি সব ছবিই মিম?
এবার একটা ছবি তো এমনি এমনি মিম হচ্ছে না। তাহলে কাকে ছবি আর কাকে মিম বলতে পারি? এবার আসি ওই মাইমেসিস কথাটায়। মাইমেসিসে আমরা একটা বস্তুর ধারণার অনুকরণে আরেকটা বস্তু সৃষ্টি করছি, যা আগেরটার একটা নকল। একটা কপি। এবার সেটারও কপি, আবার আরেকটা কপি, কপিরও কপি হতে হতে সেই আদি বস্তুটার ছাপ আমরা বর্তমানেও পেয়ে যাই। তা হলে কি সেই আদি বস্তু আর বর্তমান বস্তুটি একেবারে এক?
এও অনেকটা ডারউইনের বিবর্তনবাদের মতো। মানুষ অনেকটাই বাঁদরের মতো, কিন্তু একেবারেই বাঁদর না। অথচ বাঁদর থেকেই উদ্ভুত সে।
আচ্ছা, এই ছবির মাধ্যমে কথা বলাটা আর কোথায় আমরা দেখেছি? সেই সুদূর মিশরে। হায়রোগ্লিফিক্সে। সেখানেও প্রচলিত কয়েকটা চিহ্নের ভাব দিয়ে, অন্য একটা বার্তা পাওয়া যেত। এই রীতি অ্যাজটেক, মায়া, ইনকা সভ্যতাতেও দেখেছি, দেখেছি হামুরাবির ট্যাবলেটে, আবার এই চিনের ক্যালিগ্রাফিকৃত স্ক্রলপত্রেও দেখেছি। কিন্তু তার অনেক, অনেক বছর পরে মানুষ ছবির বদলে বিশেষ কয়েকটা চিহ্নের সাহায্যে ভাব প্রকাশ করা শিখে গিয়েছে, তাদেরকে কেউ বলছে ‘অ-আ-ক-খ’, আবার কেউ বলছে ‘এ-বি-সি-ডি’, আবার কেউ বলছে ‘অলিফ-বে-পে-টে’। সেটার ওপর ভর করেই রচিত হচ্ছে গীতগোবিন্দ, প্যারাডাইস লস্ট কিংবা রুবাইয়াৎ।
এবার, এই মিম নিয়ে এত কথা কেন? কারণ, মিম জিনিসটা আজকে প্রচলিত, প্রথাগত ভাবপ্রকাশের মাধ্যমের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। লোকে এখন লেখালেখির চেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে সেই চিত্রশিল্পে, যা আমরা হামেশাই ডিজিটালি দেখতে পারছি। এবার সেসবই কাগজে ছাপা হচ্ছে, দু’মলাটের মধ্যে বিক্রিত হচ্ছে, সানন্দে লোকে কিনছে। জানি না, এই ব্যাপারটা ভাষাতাত্ত্বিক বিবর্তনের নামে এক ধরনের বিপ্লব কতটা ভালো, কতটা মন্দ, সেটা সময়ই বলে দেবে।
(লেখক উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিলিগুড়ির বাসিন্দা)
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: পাটনার জয়প্রকাশ নারায়ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (Patna Airport) বোমা হামলার হুমকি। ইমেলের…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কাঞ্চনজঙ্ঘা বিপর্যয়ে (Train Accident) মালগাড়ির চালক ও সহকারি চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ…
গাজোল: অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছিল বলে অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের (Kanchanjungha Express) জেনারেল কামরায় উঠতে পারেননি।…
চোপড়া: বজ্রপাতে মৃত্যু হল এক যুবকের। মঙ্গলবার চোপড়া থানার আমবাড়ি-লোধাবাড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায়…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে উত্তর কোরিয়া যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Putin…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কেরলের বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও তাঁর কন্যা টি বিণার…
This website uses cookies.