দিনহাটা: বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী পরিচয়ে হাজতে পুড়েছিল পুলিশ। পুলিশের ভুলেই কোচবিহারের দিনহাটা ১ ব্লকের নিগমনগরের বাসিন্দা শ্যামলচন্দ্র পাল পুলিশের খাতায় হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের টাঙাইল জেলার বাসিন্দা হরিলালচন্দ্র পাল। আর উর্দিধারীদের সেই ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে নিরপরাধ মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তিকে। সাজানো কেসের ভিত্তিতে বিনা দোষেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী পরিচয়ে জীবনের প্রায় ৫ টি বছর জেলে কাটাতে হয় তাঁকে। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের নির্দেশে বিনা শর্তে মুক্তি পেয়ে শুক্রবার বাড়ি ফিরলেন শ্যামল। এদিন সকাল ১০ টা নাগাদ বাড়ি ফিরলে এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পরিবার, পরিজন ও প্রতিবেশীরাও ভিড় জমান তাঁর বাড়িতে।
দীর্ঘদিন বহরমপুরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মানসিক হাসপাতালে থাকলেও শ্যামলের অবস্থার বিশেষ কোনও উন্নতি হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে স্ত্রী চায়না কুণ্ডু পাল বলেন, “ওনাকে বাড়িতে ফেরাতে পেরে ভালো লাগছে। ওনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।” তবে বহরমপুর জেলে ওনার সেরকম কোনও চিকিৎসা হয়নি, বরং বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলেই মত তাঁর পরিবারের। স্থানীয় তৃণমূল নেতা সন্তোষ বর্মন জানান, ‘যেসময় খোঁজ পাওয়া গিয়েছে তখন থেকেই ওনার পাশে থেকেছি। আজ বাড়ি ফিরলেন। ওনার চিকিৎসার বিষয়টি ভাববে গ্রামপঞ্চায়েত প্রশাসন।’
জানা গিয়েছে, মানসিকভাবে সামান্য ভারসাম্যহীন শ্যামলচন্দ্র পালের পৈতৃকভিটা মাথাভাঙায়। তবে তিনি নিগমনগর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতেই স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে নিয়ে থাকতেন। মাথাভাঙায়ও তাঁর নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ২০২০ নাগাদ হঠাৎই একদিন মাথাভাঙা থেকে উধাও হয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে অনেক খোজাখুজির পরও তাঁকে খুজে না পেয়ে মাথাভাঙা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন শ্যামলের মা মায়ারানী পাল। কিন্তু তারপরেও খোঁজ মেলেনি তার। এরপর ২০২২ সালে হঠাৎই বহরমপুর সংশোধনাগারে কর্মরত নিগমনগরের এক কর্মীর নজরে পড়েন শ্যামল। খবর আসে পরিবারের কাছে। খোঁজ খবর নিতেই জানা যায়, মেখলিগঞ্জ থানা এলাকায় গ্রেপ্তার হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন শ্যামল সাজা পাচ্ছেন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী পরিচয়ে। পুলিশের খাতায় তিনি হয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশের টাঙাইল জেলার নাগরিক। এরপর দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া ও লড়াইয়ের পর অবশেষে সম্প্রতি শ্যামলকে নিঃশর্ত মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এরপরই শুক্রবার উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে চেপে বাড়ি ফেরেন শ্যামল ও তাঁর পরিবার। শ্যামলের স্ত্রী ও পুত্র গিয়েছিলেন শ্যামল কে আনতে। স্ত্রীর কথায়, ‘শাশুড়ি মা খবর পেয়ে খুশি। তবে উনি অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি।’