সৌরভকুমার মিশ্র, হরিশ্চন্দ্রপুর: সংসারে চরম অভাব। আবার অসুস্থ বাবার জন্যও চিকিৎসার টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড়ে এবং পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে এক মাস আগে চণ্ডীগড়ে নির্মাণশ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার গোহিলা গ্রামের আকালু রায় (৪৫)। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে বড়ই অঞ্চলে সোমবার দুপুরে সেখানেই মাটিচাপা পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। এখন আর্থিক কারণে বাড়িতে দেহ ফেরানো নিয়ে চিন্তায় পড়েছে ওই পরিযায়ীর পরিবার। অবশ্য প্রশাসনের তরফে পরিবারটি যাতে সমস্তরকম সহায়তা পায়, তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। বছরের শুরুতেই ফের ভিনরাজ্যে মৃত্যু হল আরেক শ্রমিকের। এক মাস আগে আকালু চণ্ডীগড়ে যান। সেখানে তিনি ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ প্রকল্পে শ্রমিকের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। গত সোমবার দুপুরে মেশিন দিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরির কাজ চলছিল। সেই সময় ওই গর্তের নীচে নেমে কাজ করছিলেন আকালু। হঠাৎ গর্তের মাটি ধসে পড়ে। ধসের নীচে চাপা পড়ে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আকালুর। প্রকল্পে নিযুক্ত সংস্থার তরফে আকালুর পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
আকালুর বাড়িতে রয়েছে বৃদ্ধ বাবা এবং স্ত্রী। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। শোকে আকুল বাবা অজন রায়ের আক্ষেপ, ‘সংসারের মুখে হাসি ফোটাতে এবং আমার চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করতেই ছেলে ভিনরাজ্যে গিয়েছিল। এখন ছেলের নিথর দেহ ফিরবে বাড়িতে। এলাকায় কাজ না পেয়ে বাইরে গিয়েছিল। এরপর সংসার কীভাবে চলবে বুঝতে পারছি না। ছেলের দেহ যে ফিরিয়ে আনব, সেই টাকার সংস্থান এখনও করতে পারছি না।’
জেলা পরিষদ সদস্য তৃণমূলের মর্জিনা খাতুনের আশ্বাস, ‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। শুনতে পেলাম ভিনরাজ্যে নির্মাণকাজে গিয়ে মাটিচাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে আকালুর। পরিবারটি যাতে প্রশাসনের তরফে সমস্ত সহায়তা পায়, আমি সেই ব্যবস্থা করব।’ হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও সৌমেন মণ্ডল জানান, ‘প্রশাসনের ত্রাণ তহবিল থেকে ওই শ্রমিকের পরিবারকে সমস্তরকম সাহায্য করা হবে।’
আকালুর মর্মান্তিক পরিণতিতে স্থানীয় শিক্ষক রফিকুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এলাকায় কর্মসংস্থান নেই। তাই স্থানীয় তরুণ, এমনকি বৃদ্ধরাও কাজের সন্ধানে বাইরে চলে যাচ্ছেন। আর সাদা কাপড়ে কফিনবন্দি হয়ে এলাকায় তাঁদের দেহ ফিরছে। প্রশাসন থেকে জনপ্রতিনিধি কারও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। কিছু সরকারি সাহায্য দিয়ে তাঁরা দায় ঝেড়ে ফেলছেন।’
এদিকে কবে, কীভাবে ছেলের দেহ ফেরাবে সেই চিন্তায় আকুল আকালুর হতভাগ্য পরিবার।