পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: বাইরের রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। এক দুজন নয় এলাকার একাধিক শ্রমিক রাজ্যের বাইরে কাজে যাওয়ার পর যেন দুম করে উবে যাচ্ছেন। বালুরঘাট শহর থেকে ৩ কিমি দূর ভাটপাড়া গ্রামের ভুষিলা এলাকায় প্রায় সাতজন এমনভাবেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। এলাকায় কারও স্বামী তো কারও বাবা অন্যের হাত ধরে বাইরে কাজ করতে গিয়ে উধাও। অনেকের পরিবার প্রিয়জনদের সন্ধান পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে। তারপরেও তাদের কোনও খোঁজ মেলেনি।
জেলায় তেমন কর্মসংস্থান নেই। উপার্জনের আশায় ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন শ্রমিকরা। আর এখানেই খাতা খুলে বসছে দালালরাজ। পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্ন তুলে দিতে তাদের হাত ধরেই দিল্লি, গুজরাট সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যাচ্ছেন তারা। এখানে দাদনপ্রথাও রমরমিয়ে চলছে। কাজে যাওয়ার আগেই এককালীন টাকা পরিবারের হাতে তুলে দিচ্ছেন শ্রমিকরা। লোকগুলো নিজেদের গ্রাম এবং কয়েক কিলোমিটার দূরের পাগলিগঞ্জ গ্রামের কয়েকজন দালালের হাত ধরে ভিনরাজ্যে গিয়েছিলেন। যাদের কথা শুনে অচেনা জায়গায় কাজে গিয়েছিলেন শ্রমিকরা, পরিবারের লোকেরা তাদের কাছে গেলেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। পরিবারগুলোর দাবি, কখনও বলা হচ্ছে তাঁরা ট্রেন থেকে কোথাও নেমে পড়েছে। আবার কখনও বলা হচ্ছে কাজ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে।
এবছর পুজোর পরেই বাইরের রাজ্যে কাজে গিয়েছিলেন মঙ্গল হেমব্রম। তারপর থেকেই বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তাঁর স্ত্রী কাজলি হাঁসদা এদিন বলেন, ‘যাঁদের সঙ্গে কাজে গিয়েছিলেন তারা বলছে বিকেলেই তিনি পালিয়ে যান। ওরাই নাকি থানায় অভিযোগ করেছে। ওদের ভরসায় থেকে আমরা আর পুলিশকে জানাইনি।’ কিন্তু বাড়ির মানুষটার এখনও কোনও খবর পেলাম না।
জোসেফ মুর্মু কাজে গিয়েছিলেন পাঁচ বছর আগে। তার মেয়ে কোয়েলের বক্তব্য, ‘বাবা কোন রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন জানি না। দাদনে পাওয়া কিছু টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। যাঁদের সঙ্গে গিয়েছিলেন তাঁরাও বাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলেছিল। আমার বাবার মতো অনেকেই নিখোঁজ হয়ে আছেন।’
দেড় বছর আগে দিল্লিতে কাজে গিয়ে নিখোঁজ হন সমীর দাস। তার স্ত্রী অনিতা দাস বলেন, ‘স্বামী খোঁড়া মানুষ। দুটো ইট টানার ক্ষমতা নেই। তবু তাঁকে নির্মাণকর্মী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি গাজিয়াবাদে কাজ করতাম। সেখান থেকে দিল্লি গিয়ে খুঁজেও পাইনি। সেখানে নিখোঁজ পোস্টার দিয়েছি। থানায় জানিয়েও কোনও সন্ধান পাইনি।’