মহম্মদ হাসিম, নকশালবাড়ি : দুই নাবালিকা পড়ুয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠল খোদ স্কুলের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে অধ্যক্ষের মেয়ে ও স্কুলের আরও দুই কর্মীর। ঘটনাটি নকশালবাড়ির একটি বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের।
মানসিক নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছায় কালীপুজোর রাতে। ভয়ে, দ্বিধায় ট্রমায় চলে যায় দুই নাবালিকা। তাদের ভর্তি করা হয় নকশালবাড়ি হাসপাতালে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর তারা একটু সুস্থ হয়ে উঠলে বাড়িতে গোটা ঘটনা জানায়। তারপরই সোমবার স্কুলের অধ্যক্ষ সহ বাকিদের বিরুদ্ধে নকশালবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন দুই নাবালিকার বাবা-মা। অভিযোগের প্রতিলিপি দেওয়া হয় নকশালবাড়ির বিডিও-কেও। ঘটনায় পকসো আইনে মামলা রুজু করে তদন্তও শুরু করেছে পুলিশ। এদিকে, ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই স্কুলের অধ্যক্ষ পালিয়ে গিয়েছেন বলে দাবি।
বিডিও প্রণব চট্টরাজ বলছেন, ‘আমি সোমবারই অভিযোগপত্র পেয়ে নকশালবাড়ি থানার ওসি এবং স্কুল পরিদর্শককে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
৩১ অক্টোবর কালীপুজোর রাতের ঘটনা। পুজোর ছুটি থাকায় অনেকেই হস্টেল ছেড়ে বাড়ি চলে গিয়েছিল। সেদিন রাতে হস্টেলে ছিল সপ্তম ও নবম শ্রেণিতে পাঠরতা দুই নাবালিকা। অভিযোগ, প্রথমে হস্টেলের সমস্ত আলো নিভিয়ে ভয় দেখানো হয়। ব্লুটুথ স্পিকারের মাধ্যমে ভয়ানক আওয়াজ সৃষ্টি করে ঘণ্টা দুয়েক তাদের ওপর মানসিক অত্যাচার করা হয়। পুরো ঘটনায় অভিযোগের তির অধ্যক্ষের মেয়ে এবং স্কুলের আরও দুই কর্মীর দিকে। ঘটনার পর অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তিনি দুই পড়ুয়াকে নিজের ঘরে ডেকে শারীরিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার নকশালবাড়ি থানার সামনে দাঁড়িয়ে এক নাবালিকার বাবা বলেন, ‘এই ঘটনা নিয়ে আমরা প্রথমে স্কুলের চেয়ারম্যানকে অভিযোগ জানাই। কিন্তু অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেদিনের ঘটনার পর এক মাস ধরে আমার মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। চিকিৎসা চলছে। কিন্তু যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুলের একাধিক মেয়ের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে।’
পরিবারের অভিযোগ, স্কুলের অধ্যক্ষ আগেও ছাত্রীদের সঙ্গে নানা অশালীন আচরণ করতেন। ভয়ে মেয়েরা মুখ খোলার সাহস পেত না। নাবালিকার বাবার কথায়, ‘আমি দিনমজুরি করি। একমাত্র মেয়েকে হস্টেলে রেখেই পড়াশোনা করাতে চাইছিলাম। কিন্তু এমনভাবে মেয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হবে, কল্পনাই করতে পারিনি।’
স্কুলটিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩২৪। যার মধ্যে ৭০ জন হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করে। অধিকাংশই আদিবাসী ঘরের ছেলেমেয়ে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বাকি পড়ুয়াদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
স্কুলের অধ্যক্ষ প্রাণেশ গাইন অবশ্য নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন। তিনি বলছেন, ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। কালীপুজোর রাতে আশপাশে ডিজে চলছিল। পুজোপার্বণও হচ্ছিল। তাই নানা শব্দ সৃষ্টি হয়েছে। আমার কাছে অভিযোগ আসার পর স্কুলের দুই স্টাফকে সাসপেন্ড করেছি। বাকি অভিযোগগুলির তদন্ত এখনও চলছে।’
সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করলেও কেন স্কুলের দুই কর্মীকে সাসপেন্ড করলেন, সেই ব্যাখ্যা দেননি অধ্যক্ষ। তাঁর যুক্তি, ‘আমি বর্তমানে স্কুলে নেই। বাইরে আছি। তাই বেশি কিছু বলতে পারব না।’