সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: মালদা থেকে শিলিগুড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ (Missing) হয়ে যাওয়া জয় অধিকারীর খোঁজ মিলল মহারাষ্ট্রে। শুক্রবার গভীর রাতে মুম্বইয়ের (Mumbai) দাদর রেলস্টেশন থেকে জয় ফোনে যোগাযোগ করেন শিলিগুড়িতে (Siliguri) স্ত্রী শ্রাবণী অধিকারীর সঙ্গে। ফোন পেতেই স্বস্তি ফেরে বাড়িতে। এরপর তড়িঘড়ি শিলিগুড়ি ফেরার বিমানের টিকিট কেটে পাঠানো হয় তাঁকে। রবিবার বিমানে বাগডোগরায় পৌঁছানোর কথা জয়ের।
সূত্রের খবর, দুষ্কৃতীদের ফাঁদে পড়ে নিজের মোবাইল ফোন, টাকা খুইয়েছেন তিনি। তবে পরিবারের তরফে কেউই তাঁর নিখোঁজের কারণ নিয়ে মুখ খোলেননি। শনিবার জয়ের সঙ্গে দিনহাটার এক চিকিৎসকের ফোনে কথা হয়। এরপর তিনি ফেসবুকে জয়কে ট্যাগ করে একটি পোস্ট করেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘জয়ের সঙ্গে যা হয়েছে, সেই রোমহর্ষক কাহিনী সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে।’ গত মঙ্গলবার রাতে মালদা থেকে ট্রেনে চেপে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার ওই কর্মীর শিলিগুড়িতে ফেরার কথা ছিল। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাকিমপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি। আদতে জয়ের বাড়ি আলিপুরদুয়ারে। স্ত্রীকে মেসেজ পাঠিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায়। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে শ্রাবণীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সুজয় ঘটকের কথায়, ‘শ্রাবণীর সঙ্গে কথা হয়েছে। জয় বাড়ি ফিরলে সবকিছু জানা যাবে।’
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে মালদা টাউন স্টেশনে সরাইঘাট এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন জয়। জেনারেল কামরায় ভিড় বেশি থাকায় সেই ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। প্ল্যাটফর্মে বসে তিস্তা-তোর্ষা এক্সপ্রেসের অপেক্ষায় ছিলেন। সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকায় খাওয়ার সময় পর্যন্ত পাননি সেদিন। ভীষণ ক্লান্ত ছিেলন। কিছুক্ষণ পর ৩ এবং ৪ নম্বর প্ল্যার্টফর্মে তিস্তা-তোর্ষা ও কামরূপ এক্সপ্রেস পাশাপাশি এসে দাঁড়ায়। তখন জয় ভুলবশত তিস্তা-তোর্ষার বদলে হাওড়াগামী কামরূপের জেনারেল বগিতে উঠে পড়েন।
সেখানেই কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছিল। তাঁরা জয়কে রুটি খেতে দেন। রুটি খেয়েই নাকি ধীরে ধীরে অচৈতন্য হয়ে পড়েন ওই বেসরকারি সংস্থার কর্মী। অভিযোগ, সেই সুযোগে দুষ্কৃতীরা জয়ের কাছ থেকে তাঁর মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ নিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারেন, ভুল ট্রেনে উঠেছেন তিনি। তখন মাথা ঠিকমতো কাজ করছিল না তাঁর। জয় যাতে ট্রেন থেকে না নামেন, সেই হুঁশিয়ারি দেয় দুষ্কৃতীরা। হাওড়া পৌঁছানোর আগে দুষ্কৃতীরা মোবাইল থেকে সিম কার্ড বের করে তাঁকে দেয়। টাকা নিয়ে ফেরায় মানিব্যাগ।
এরপর জয় হাওড়া থেকে মুম্বইগামী ট্রেনে ওঠেন। যাত্রাপথে অসচেতন অবস্থায় ট্রেনের মধ্যে পড়েছিলেন তিনি। মুম্বইয়ের আগে কোনও একটি রেলস্টেশনে একজন টিটি এসে তাঁকে দেখে যান। ট্রেনটি দাদর স্টেশনে থামার পর নেমে অনেকক্ষণ প্ল্যার্টফর্মে পড়েছিলেন জয়। তারপর জিআরপি তাঁকে উদ্ধার করে। নিজের সিম কার্ডটি অন্য মোবাইলে ভরে শুক্রবার গভীর রাতে স্ত্রীকে ফোন করে গোটা ঘটনা তিনি জানিয়েছেন। পাশাপাশি যে সংস্থায় তিনি কর্মরত, সেখানকার কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সংস্থার আধিকারিকরা মুম্বইয়ের এক হোটেলে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেন।
উত্তর-পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জলকিশোর শর্মার প্রতিক্রিয়া, ‘বিভিন্ন জায়গায় জয়ের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর খোঁজ পাওয়া স্বস্তির খবর।’