সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: মোবাইল চুরি হয়নি, অপহরণ করার চেষ্টাও হয়নি। তবে কী কারণে দুষ্কৃতীরা জয় অধিকারীকে মাদক খাইয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। সূত্রের খবর, নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তদন্তকারীদের বয়ান দেওয়ার সময়ও তাঁর কথায় একাধিক অসঙ্গতি উঠে এসেছে। রবিবার সকাল দশটা নাগাদ জয় একাই মুম্বই থেকে বিমানে বাগডোগরায় নামেন। বিমান বন্দর থেকে বাইরে বের হতেই তাঁকে এনজেপি জিআরপির কর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যান। সেখানে তিন ঘন্টা ধরে জয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জয়ের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। যদিও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পর জয়ের পরিবার-পরিজন তাঁকে আড়াল করে রাখেন। ঘটনা প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের সামনে তিনি কিছুই বলতে চাননি।
গত ২৪ ডিসেম্বর মালাদা থেকে ট্রেনে ফেরার সময় স্ত্রী শ্রাবণী অধিকারীকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করে নিখোঁজ হয়ে যান শিলিগুড়ির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাকিমপাড়ার ওই বাসিন্দা। আদতে আলিপুরদুয়ারের বাড়ি হলেও জয় কাজের সূত্রে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সপরিবারে হাকিমপাড়াতে থাকেন। পেশায় বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারি সংস্থার কর্মী জয়ের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রথম থেকেই রহস্য দানা বাঁধছিল। এদিন দুপুরে জয় বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের কারও সঙ্গে তাঁকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। নিখোঁজের ঘটনার পর থেকে জয়ের স্ত্রী শ্রাবণী সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। এদিন তাঁর ফ্ল্যাটে গেলে জয় সামনে আসেননি। জয়ের ভাই অজয় অধিকারী বলেন, ‘দাদা খুবই ক্লান্ত। ঘুমিয়ে পরেছেন। নিশ্চিতভাবে ধকল কাটতে সময় লাগবে। দাদা মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ হলে সবকিছু জানাবেন।’
কি করে জয় এক ট্রেন থেকে অন্য ট্রেনে উঠে গেল? দুষ্কৃতীদের ফাঁদে পরার পরও কী করে স্ত্রীকে হোয়াটঅ্যাপে ম্যাসেজ করলেন? ট্রেনের কামড়ায় তিনি কোথায় বসেছিলেন যে অন্য যাত্রীরা জয়কে কেন দেখতে পেলেন না বা সাহায্য করলেন না? দুষ্কৃতীরা কেনই বা জয়ের দামি মোবাইল সহ ব্যাগের অন্য সামগ্রী তাঁকে ফেরত দিয়ে দিল? এমন একাধিক প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, জয় মালদায় একাধিক ট্রেনে উঠে আবার নেমে পড়েছিলেন। মালদা ও হাওড়া থেকে ট্রেনে তিনি একাই উঠেছিলেন। তাঁর সঙ্গে কাউকে দেখা যায়নি। যা ওই স্টেশনগুলির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে পুলিশের হাতে এসেছে। সূত্রের খবর, কতজন দুষ্কৃতী ওই কর্মীকে মাদক মেশানো খাবার খাইয়েছিল সে বিষয়টি স্পষ্ট করে তিনি পুলিশকে বলতে পারেননি। এমনকি দুষ্কৃতীদের বয়স আনুমানিক কত ছিল সেই বিষয়টিও তিনি বয়ান দেওয়ার সময় জানাতে পারেননি। শিলিগুড়ি জিআরপির ডিএসপি অরিজিৎ পাল চৌধুরী বলেন, ‘মালদা, হাওড়া, মুম্বইয়ের মতো বড় এলাকা ধরে গোটা ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। জয়ের বয়ান নেওয়া হয়েছে। অনেক কথা তিনি মনে করে বলতে পারেননি। যদি তাঁর কোনও কথা মনে পরে সেক্ষেত্রে তাঁর বয়ান আবার নেওয়া হবে।’