সানি সরকার, শিলিগুড়ি: কারও পরিকল্পনা ছিল দার্জিলিংয়ে পা রাখার, কারও আবার আত্মীয়র বাড়িতে পৌঁছে ক’টা দিন কাটিয়ে দেওয়ার। পুজো পর্যটনকে মাথায় রেখে বাড়তি কোচ চালানোর পরিকল্পনা ছিল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের। কিন্তু বাংলাদেশের(Bangladesh) অস্থির পরিস্থিতিতে সমস্ত পরিকল্পনাই এখন বিশবাঁও জলে। অতিরিক্ত কোচ তো দূরের কথা, বরং প্রতিবেশি রাষ্ট্রে পড়ে থাকা মিতালির কামরাগুলিকে দেশের মাটিতে কী করে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে রেলের কাছে। এই পরিস্থিতিতে যে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চালাচল অসম্ভব, তা অস্বীকার করছেন না রেলকর্তারা। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জলকিশোর শর্মা বলছেন, ‘এখন দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চালাচল বন্ধ রয়েছে। নতুন করে কবে মিতালি এক্সপ্রেস চলাচল শুরু হবে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।’
প্রায় আড়াই মাস হতে চললো চাকা গড়াচ্ছে না মিতালি এক্সপ্রেসের(Mitali Express)। নিউ জলপাইগুড়ি জংশন (এনজেপি) থেকে শেষবার ট্রেনটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছেছিল ১৭ জুলাই। কিন্তু ফিরে আর আসতে পারেনি, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ওই সময় বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠায়। দ্রুততার সঙ্গে বিশেষ বিমানে আরও কয়েকজন ভারতীয়র সঙ্গে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল রেলকর্মীদের। সেসময় কোচগুলি ফিরিয়ে আনতে না পারার জন্যই বাংলাদেশের মাটিতে সেখানকার রোদ-জলে রয়েছে কামরাগুলি। রেলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচগুলি যাতে সুরক্ষিত থাকে বা কোচগুলির জন্য যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়, তার জন্য ভারতের তরফে গত মাসে চিঠি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রণালয়কে। এই প্রসঙ্গে রেলের এক আধিকারিক বলছেন, ‘কোচগুলি সুরক্ষিত রয়েছে বলে বাংলাদেশের তরফে আমাদের জানানো হয়েছে।’ উল্লেখ্য, মিতালি এক্সপ্রেসের কোচ বাংলাদেশে পড়ে থাকলেও মৈত্রী এবং বন্ধন এক্সপ্রেস রয়েছে ভারতের মাটিতে। ১৭ জুলাই বাংলাদেশে না যাওয়ার জন্যই কলকাতা থেকে ছাড়া ওই দুটি ট্রেন দেশের মাটিতে থাকতে পেরেছে। মিতালির সঙ্গে মৈত্রী এবং বন্ধনও দুই দেশের মধ্যে চলাচল করছে না।
কিন্তু কোচগুলিকে কীভাবে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হবে, সেই সংক্রান্ত কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। যেমন জানা যাচ্ছে না পুনরায় ভারতৃবাংলাদেশের মধ্যে ট্রেনটি কবে চলবে। পরিস্থিতি অনুকূল না হলে যে ট্রেনটির চাকা নতুন করে গড়াবে না, তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন রেল কর্তারা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার থাকলেও, পরিস্থিতি যে এখনও দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচলের সহায়ক হয়ে ওঠেনি, তাও অস্বীকার করছেন না কেউই। একারণেই মিতালি এক্সপ্রেসকে কেন্দ্র করে ক্রশবর্ডার টুরিজম যে গতি পেয়েছিল, তা দুই বছরের মাথায় বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। এনজেপির থেকে ট্রেনটির বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২২-র ১ জুন। ট্রেনটির চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে মন খারাপ দুই পাড়ের বাসিন্দাদের। বাংলাদেশের পর্যটনু ব্যবসায়ী, টিটো চৌদুরী বলছেন, ‘পুজোর সময় সিকিমের পাশাপাশি দার্জিলিংয়ের প্রচুর বুকিং ছিল। এখন পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই। তাই বেভেছিলাম নতুন করে মিতালি এক্সপ্রেস চলবে। কিন্তু ট্রেনটির চলাচলের কোনও সম্ভাবনাই দেখছি না। তাই পর্যটকদের টাকা ফেরৎ দিতে হয়েছে।’ ট্রেনটি চলাচলের দিকে তাঁরা তাকিয়ে রয়েছেন বলে জানান ঢাকার বাসিন্দা সুলতানা জাহান মিতু। দুই বছর আগে মিতালিতে চেপে পুজোর সময় বাংলাদেশে গিয়েছিলেন শান্তিনগরের ভজন ঘোষদস্তিদার। তিনি বললেন, ‘ওখানে অনেক আত্মীয় রয়েছে। ভেবেছিলাম এবছরও পুজোতে ওখানে যাবো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যাচ্ছি না। ট্রেন চালু হলে এবং পরিস্থিতি ঠিক থাকলে তথন পরিকল্পনা করা যাবে।’