শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: প্রকাশ্যেই এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (MJN Medical) থেকে চিকিৎসা সামগ্রী পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। বাইরের দোকানে সেই সামগ্রী বিক্রি করে মোটা টাকা ঢুকছে হাসপাতালেরই একাংশ কর্মীর পকেটে। নিরাপত্তারক্ষীদের চোখের সামনে এমনটা ঘটলেও অজানা কোনও কারণে তাঁরাও চুপ। মাঝেমধ্যেই এধরনের ঘটনা ঘটছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠছে। শুক্রবার বিকেলে এমজেএন মেডিকেলের পিছনের প্রবেশপথ দিয়ে স্ট্রেচারে চাপিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার স্ট্যান্ড, ধাতব বেসিন, স্যালাইন ঝোলানোর স্ট্যান্ড সহ নানা সামগ্রী বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সংলগ্ন একটি দোকানে সেগুলি বিক্রি করে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে দুই কর্মীকে। যদিও এবিষয়ে কোনও অভিযোগ পাননি বলে দাবি করেছেন মেডিকেল কলেজের এমএসভিপি সৌরদীপ রায়। তিনি বলেন, ‘এরকম কোনও অভিযোগ এখনও পাইনি। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে পুলিশকে ঘটনাটি জানানো হবে।’
হাসপাতালের অন্দরে এধরনের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এমজেএন মেডিকেলের ভিতরেই একটি জায়গায় অব্যবহৃত পুরোনো চিকিৎসা সামগ্রী মজুত করে রাখা হয়। তার পাশেই পিছনের দিকের প্রবেশপথ রয়েছে। সেই পথ ব্যবহার করে মাতৃমায় যাওয়া যায়। বিকেলের দিকে দেখা যায় সেদিক দিয়েই হাসপাতালের দুজন কর্মী নীল কাপড়ে ঢেকে একটি স্ট্রেচার নিয়ে যাচ্ছেন। খানিকটা দূরেই একটি পুরোনো সামগ্রী কেনাবেচার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান তাঁরা। দোকানের মালিকের সঙ্গে প্রথমে দরদাম ঠিক হয়। এরপর চিকিৎসা সামগ্রীগুলি বিক্রি করে দেওয়া হয়। নীল কাপড় সরাতেই দেখা যায় সেই স্ট্রেচারে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার স্ট্যান্ড, ধাতব বেসিন, স্যালাইন ঝোলানোর স্ট্যান্ড সহ নানা সামগ্রী রয়েছে। বিক্রির টাকা নিয়ে যে স্ট্রেচারে করে সামগ্রীগুলি দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই স্ট্রেচারটি নিয়ে ওই দুজন কর্মীই হাসপাতালে ঢুকে পড়েন। প্রবেশপথে একজন নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও তাঁকে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। তবে এই পাচারের ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত রয়েছে কি? এই প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর পরিজন মৃন্ময় কর্মকারের কথায়, ‘সবার সামনে দিয়েই যেভাবে হাসপাতালের সামগ্রী পাচার হয়ে যাচ্ছে তাতে এই ঘটনায় আরও কর্মীর যুক্ত থাকার সম্ভবনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দেখা।’
হাসপাতালে প্রচুর পরিমাণে চিকিত্সা সামগ্রী অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দু’দিন আগেই রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে সেগুলি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু তার আগেই সেগুলি পাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় কর্তৃপক্ষও অস্বস্তিতে পড়েছে। হাসপাতালে প্রচুর পরিমাণে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীও মোতায়েন থাকেন। তারপরেও দিনদুপুরে হাসপাতাল থেকে সামগ্রী পাচারের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি তুলেছেন রোগীর পরিজনরাও।