দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রতিটি সার্কেলের স্কুলগুলিতে ছয় মাস ধরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। এমনটাই দাবি জেলা স্কুল শিক্ষা পরিদর্শকের। ‘ফাঁকিবাজ’ এই শিক্ষকদের টাইট দিতে এবার কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে জেলা শিক্ষা দপ্তর চালু করতে চলেছে বিশেষ অ্যাপ। মোবাইলে থাকবে সেই অ্যাপ। সেখানেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতি মেনে হাজিরা দিতে হবে শিক্ষকদের। শীঘ্রই এই অ্যাপ জেলার ১১টি সার্কেলের প্রাথমিক স্কুলে চালু করা হবে। তবে এই বায়োমেট্রিক অ্যাপ চালু নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের থেকে।
বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে সঠিক সময়ে স্কুলে না আসার এবং সঠিক সময়ে বাড়ি ফেরা নিয়ে মাঝেমধ্যে অনেক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা যায়। এই নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ জমা পড়েছে জেলা শিক্ষা দপ্তরে। গত ৬ মাসে জমা অভিযোগের ভিত্তিতে এই উদ্যোগ বলে সূত্রের খবর।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক(প্রাথমিক) দুলালচন্দ্র সরকারের কথায়, ‘জেলায় প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের উপস্থিতির হার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অসন্তোষ মিলেছে। সেকারণেই এই উদ্যোগ নিতে চলেছে প্রশাসন। এর আগে আমরা জেলার প্রতিটি সার্কেল থেকে শিক্ষকদের ৬ মাসের অ্যাটেন্ডেন্স সংগ্রহ করেছি।সেখানে শিক্ষকদের সন্তোষজনক অ্যাটেন্ডেন্স পাওয়া যায়নি। সেজন্য শিক্ষকদের অ্যাটেন্ডেন্স ডিভাইসের মধ্যে নিয়ে তাঁরা স্কুলে আছেন কিনা, তা জানা যাবে।’
এদিকে, প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়ে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে। এই উদ্যোগকে শাসকদলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি স্বাগত জানালেও বিরোধী শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষকেরা বিরোধিতা করেছেন। তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি গৌরাঙ্গ চৌহানের কথায়,‘জেলা প্রশাসন শিক্ষা দপ্তরের সহযোগিতায় যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ, প্রাইমারি স্কুলগুলিতে যদি আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় না নিয়ে আসা যায়, তবে আগামীতে সরকারি স্কুলগুলির অস্তিত্ব থাকবে না।’
যদিও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক নির্মল বোস। তিনি বলেন, ‘জেলার সর্বত্র নেটওয়ার্ক ঠিকমতো পাওয়া যায় না। মিড-ডে মিলের হিসেব পাঠাতে হিমসিম খেতে হয়। সেখানে অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে, সেটা পাগলের মাথা থেকে ছাড়া আর কারও মাথা থেকে বের হবে না।’
শিক্ষক নৃপেন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, ‘সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই অ্যাপ চালু করলে আমরা এভাবে অপমানিত হতাম না।’