প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ আগামী ২০ জুন চার দিনের সফরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিরোধী শিবিরের আশা ছিল মার্কিন সফরের আগে, রবিবার ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে অগ্নিগর্ভ মণিপুর নিয়ে সদর্থক কোনও বার্তা বা উপদ্রুত অঞ্চলে শান্তিরক্ষার আর্জি দেবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি৷ রবিবার ‘মন কী বাত’ যথা সময়ে প্রচারিত হলেও, মণিপুর রাজ্যে প্রায় দেড় মাস ধরে চলা হিংসাত্মক ঘটনা ও সন্ত্রাস রুখতে টুঁ শব্দটি শোনা গেল না মোদির কণ্ঠে।
প্রসঙ্গত, প্রতি মাসের শেষ রবিবার দেশের জনগণের উদ্দেশে নিজের মনের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘মন কি বাত’ নামের এই রেডিও অনুষ্ঠানের ১০০ পর্ব ইতিমধ্যেই পেরিয়েছে। যদিও জুন মাসে ‘মন কি বাত’ হল এক সপ্তাহ আগে। ১৮ জুন মন কি বাতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাঁর কারণ বিস্তারে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সামনের সপ্তাহে আমেরিকা সফরে যাবেন মোদি। সে জন্যেই এক সপ্তাহ আগে হল জুন মাসের ‘মন কি বাত’। এদিন প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাতে’ উঠে আসে টিবি বা যক্ষা রোগ প্রসঙ্গ। তিনি জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে টিবি-র থেকে দেশকে পুরোপুরি মুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। দেশের তরুণরা টিবি মুক্ত ভারত গড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
এই প্রসঙ্গে ডায়মন্ড হারবারের ১১ বছরের বাঁশর মুখার্জির কথাও উল্লেখ করেন মোদি, যিনি টিবি মুক্ত ভারতের লক্ষ্যে নিজের ‘পিগি ব্যাঙ্কে’ যাবতীয় সঞ্চয় সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের প্রস্তুতি, জুনিয়র এশিয়া কাপ জয়ে ভারতীয় পুরুষ ও মহিলা দলের ভূমিকা, সাইক্লোন ‘বিপর্যয়’ এবং তার মোকাবিলার সাথেই আসন্ন ২৫ জুন ‘জরুরি অবস্থা’র ৫০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তীব্র কটাক্ষও করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘ভারতের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই জরুরি অবস্থার প্রতিবাদ করেছিল। গণতন্ত্রের সমর্থকদের উপর যে অত্যাচার হয়েছিল তা এখন মনকে কাঁদিয়ে তোলে’ – নাম না নিয়ে কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে তোপ দাগেন মোদি, কিন্তু মণিপুরের প্রসঙ্গ এদিনও ঠাঁই পায়নি ‘মন কী বাতে’র আলোচ্য বিষয়ের তালিকায়।
বস্তুত, মণিপুরে গোলমাল শুরুর প্রায় দেড় মাস পরও প্রধানমন্ত্রী একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের এ পর্যন্ত গৃহীত কোনও পদক্ষেপই কাজে আসেনি। একদিন শান্ত থাকার পর সোমবার ফের একজন নিহত হয়েছেন। কুকিদের দাবি নিহত ব্যক্তি তাদের সম্প্রদায়ের মানুষ। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১৯। ঘরছাড়া প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। আহতদের তালিকা দীর্ঘায়িত। এই প্রসঙ্গেই কংগ্রেস আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নীরবতা ভেঙে মণিপুর নিয়ে পদক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছে। দলের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জয়রাম রমেশ প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘আমরা মন কি বাত এর একশো পর্ব শুনেছি। এবার মণিপুর কি বাত শুরু হোক।’ কিন্তু আদতে তা হয়নি। এর পরেই তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের কণ্ঠেও শোনা যায় ক্ষোভের সুর। তিনি টুইট করে বলেন, ‘মন কী বাত অনেক হয়েছে। এবার ‘মণিপুর কী বাত’ করার সময় এসেছে প্রধানমন্ত্রীজী।’ তিনি এও বলেন, তিনি লেখেন, ‘মণিপুর যখন জ্বলছে তখন প্রধানমন্ত্রী চুপ থাকেন কী করে?’ এর সঙ্গে মহুয়া লেখেন, ‘তাঁরা কেবল মুখেই কথা বলেন। বিজেপি উত্তরপূর্ব ভারতকে সব সময়েই বিদেশি হিসাবে দেখেছে। এটা খুবই লজ্জার এবং বেদনাদায়ক।’
কংগ্রেস সভাপতি এবং প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খড়গেও এই প্রসঙ্গে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, ‘মণিপুর নিয়ে একটা শব্দও খরচ করলেন না, একটা বৈঠকেও বসলেন না, সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করলেন না প্রধানমন্ত্রী। যেন মণিপুর ভারতের অংশই না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। সরকার ঘুমোচ্ছে আর মণিপুর জ্বলছে।’ জয়রাম রমেশের দাবি, ‘আরও একটা মন কী বাত শেষ হল, মণিপুরের প্রসঙ্গ রইলো অস্পৃশ্যই। মোদিজি সাইক্লোন বিপর্যয় নিয়ে চিন্তিত, কিন্তু মণিপুরে এই ম্যান মেড বিপর্যয়কে কোন খাতে ফেলবেন মোদীজি।’ রমেশের অভিযোগ ‘রাজধর্ম পালন করছেন না মোদী। তাঁর উচিৎ মণিপুরের পাশে এসে দাঁড়ানো, সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।’