সুস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা: বুদ্ধিমান মানুষ অস্কার ব্রুজোঁ। সারসত্যটা স্বীকার করে নিতে একমুহূর্তও দেরি করলেন না। এএফসি চ্যােলঞ্জ লিগের গ্রুপ পর্যায়ে সেরা হওয়া আর আইএসএলে জয় পাওয়ার মধ্যে যে তফাত আছে, সেই কথা তাই সাংবাদিক সম্মেলনে বলেই ফেললেন দ্বিধা না করে।
দীপাবলির পর উৎসবের আবহ এখনও কাটেনি এই রাজ্যের। এরই মধ্যে ফুটবল উৎসবও আবার শুরু হতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি-মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যাচ দিয়ে। আইএসএলে প্রথম মুখোমুখি দুই দল। এহেন ম্যাচে দুই পক্ষেরই অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরতে লড়বে। এই লড়াই নীচ থেকে উপরে উঠে আসার। টানা তিন ম্যাচে হেরে বিপর্যস্ত মহমেডান। ফলে আন্দ্রেই চেরনিশভের চাকরি নিয়েই এখন টানাটানি অবস্থা। তবু তিনি বলতে পারবেন, তাঁর হাতে আছে চার-চারটে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। সেখানে ইস্টবেঙ্গলের লড়াইটা সম্পূর্ণ আলাদা। ব্রুজোঁর কোচিংয়ে আইএসএলের লড়াইটা শূন্য থেকে শুরু করতে চলেছে লাল-হলুদ বাহিনী। প্রথম ৬ ম্যাচের পর কোনও পয়েন্ট না পেয়ে লিগ তালিকার শেষে থাকাটা সমর্থকদের কাছে যেমন যন্ত্রণার, তেমনি ক্লাবের পক্ষে লজ্জারও। কিন্তু এই ম্যাচ ঘিরে তাঁদের আশায় বুক বাঁধারও কারণ থাকছে। এক, মহমেডানকে শুরুতে ঝলমলে লাগলেও এই মুহূর্তে হতশ্রী দশা। আর দুই, সদ্যই এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ থেকে এক বুক অক্সিজেন নিয়ে ফিরেছেন মাদি তালাল-দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোসরা।
আর সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই মরশুমের দ্বিতীয় ডার্বি (যাকে বাকিরা মিনি ডার্বি বললেও সাদা-কালো শিবির মানতে রাজি নয়) জিততে মরিয়া ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু ‘জিততে চাই’ বললেই যে জেতা যায় না সেটা মাথায় রাখছেন ব্রুজোঁ। স্প্যানিশ কোচের মন্তব্য, ‘ওরা ভালো জায়গায় নেই বটে কিন্তু আমাদেরও তো একই অবস্থা। এটা কিন্তু আইএসএলের খেলা। কোনও ঘরোয়া টুর্নামেন্টের খেলা নয়।’ এটাই ঘটনা। ব্রুজোঁ নিজেও বুঝতে পারছেন, বসুন্ধরা কিংস বা নেজমে এসসি-র থেকে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের দলগুলি অনেক বেশি শক্তিশালী। তাছাড়া মহমেডান যত খারাপই করুক না কেন, এই রকম ম্যাচই বড় দলগুলি ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বেছে নেয়। তবু আক্রমণাত্মক ফুটবল দিয়েই মূলত ম্যাচটা বার করার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। তাই ভারতীয় ডিফেন্স নামিেয় দিয়ামান্তাকোস-মাদিহ তালাল-সাউল ক্রেসপো-ক্লেইটন সিলভাকে একসঙ্গে নামিয়ে গোল তুলে নিয়ে পরে হিজাজি মাহেরকে নামান তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাঁর মন্তব্যেও একই ইঙ্গিত, ‘আমরা দ্রুতগতি এবং মাঝমাঠের দখল নিয়ে প্রতিপক্ষ বক্সে হানা দেওয়ার লক্ষ্যেই শনিবার নামব। আমরা আগের সব ম্যাচ হেরেছি ডিফেন্সিভ ট্রানজিশনে বলের দখল হারিয়ে। আক্রমণভাগকে যেমন স্বাধীনতা দিতে হবে তেমনি ডিফেন্স সংগঠনও সঠিক রাখতে হবে।’
এই ঝোড়ো আক্রমণ আর গতির সামনে শেষ তিন ম্যাচেই অসহায় লেগেছে মহমেডান ডিফেন্সকে। যদিও চেরনিশভ ডিফেন্ডারদের আড়াল করতে বলে গেলেন, ‘এর জন্য শুধুই ডিফেন্ডারদের দোষ দিলে হবে না। অ্যাটাকাররা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সের উপর চাপ সৃষ্টি করলে এটা হত না। আমরা নিজেরা হাই প্রেসিং অ্যাটাকিং ফুটবল খেলতে পারিনি। এটা শুধু ডিফেন্স নয়, এগারোজনের দায়িত্ব। অনেক সময় ব্যক্তিগত ভুলেও আমরা গোল খেয়েছি।’ এই ম্যাচে চোটের জন্য সম্ভবত নেই জোসেফ আদজা। ফ্লোরেন্ট ওগিয়েরই খেলবেন সেক্ষেত্রে। বাকি দল একই থাকার সম্ভাবনা।
শনিবার সম্ভবত দুই পক্ষের কাছেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচ হতে চলেছে। তাই শনিবাসরীয় সন্ধ্যা উপভোগ্য হতে পারে দুই দলের সমর্থকদের কাছেই।