কোচবিহার: পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে ক্রমশ উধাও হয়ে যাচ্ছে কোচবিহারের বাণেশ্বরের ঐতিহ্যবাহী মোহন (কচ্ছপ)। শনিবার বাণেশ্বরের পিএইচই-র জলট্যাংকের পাশে কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার মেইন রোডের ধারে সামান্য জঙ্গলের মধ্যে বস্তাবন্দি অবস্থায় দুটি কচ্ছপকে উদ্ধার করা হয়। দুটি কচ্ছপের মুখেই বড়শি লাগানো ছিল। এর আগেও দুবার মোহন পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। সবমিলিয়ে বাণেশ্বর থেকে যে মোহন পাচার হচ্ছে এবং পাচারের একটা বড় চক্র গড়ে উঠেছে তা পরিষ্কার। যদিও বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসন অনেকটাই নির্বিকার। এতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শনিবার স্থানীয় এক বাসিন্দা গোরু চড়াতে গিয়ে কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার মেইন রোডের ধারে রয়্যাল মোড়ের কাছে সামান্য ঝোপঝাড় জঙ্গলে বস্তাবন্দি অবস্থায় কচ্ছপ দুটিকে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে বাণেশ্বর মোহন রক্ষা কমিটির সদস্যরা সেখানে যান। তাঁরা গিয়ে পুলিশ ও বন দপ্তরকে খবর দেয়। এরপর বস্তা দুটি খুললে দেখা যায় ভেতরে দুটি বড় কচ্ছপ রয়েছে। দুটোর মুখেই বড়শি-সুতো লাগানো রয়েছে।
এ বিষয়ে বাণেশ্বর মোহন রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন শীল বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকেই বাণেশ্বরে কচ্ছপ পাচার হচ্ছে। এখানে একটা পাচার চক্র গড়ে উঠেছে। এদিনের ঘটনা সেকথাই প্রমাণ করে। দুটি কচ্ছপের মুখেই যেভাবে বড় বড়শি ও সুতো ঝুলছে। তা থেকে পরিষ্কার পাচারকারীরা এখন মাছ ধরার বাহানায় এই কচ্ছপ ধরে বাইরে পাচার করে দিচ্ছে। আর এ কারণেই বাণেশ্বরের বিভিন্ন জলাশয়ে কচ্ছপের সংখ্যা দিনে দিনে এত কমে আসছে।‘
মোহন রক্ষা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাণেশ্বরে একটি মোহন পাচারচক্র গজিয়ে উঠেছে। এই চক্রটি বাণেশ্বরের বিভিন্ন জলাশয় থেকে মোহন চুপিসারে অসম সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতে হরিনের মাথা, গন্ডারের শিংয়ের মতো মোহন তথা কচ্ছপের শক্ত খোলস অত্যন্ত চড়া দামে বিক্রি হয়। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় চুপিসারে কচ্ছপের মাংস বিক্রি হয় বলে খবর।
বিষয়টি নিয়ে বাণেশ্বরে প্রথম থেকে মোহন নিয়ে আন্দোলন করে আসা কোচবিহার জেলা পরিষদের সদস্য তথা মোহন রক্ষা কমিটির সভাপতি পরিমল বর্মন বলেন, ‘বানেশ্বর থেকে ক্রমশ পাচার হয়ে যাচ্ছে মোহন। এতে মোহনের সংখ্যা বাণেশ্বরে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। মারুগঞ্জের আলুধোওয়া হয়ে অধিকাংশ মোহন উত্তর-পূর্ব ভারতে পাচার হচ্ছে বলে তারা খবর পেয়েছেন। বিষয়গুলি একাধিকবার তারা পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন সেভাবে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। মোহন পাচার রুখতে বাণেশ্বরে অবিলম্বে কিছু সিভিক পুলিশ নিয়োগের দাবিও জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে কোচবিহার সদর মহকুমাশাসক রাকিবুর রহমান ভুটিয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।