রাঙ্গালিবাজনা: মাদারিহাটের খয়েরবাড়ি গ্রামে কয়েকমাস আগের ঘটনা! এক তরুণের সাধ হয়েছিল বিয়ে করার। কিন্তু হাতে টাকাকড়ি কম, বুদ্ধি আঁটে সে। পাশের মহল্লার এক সরল তরুণকে সে বোঝায়, মাসে মাসে অল্প করে টাকা দিলেই নতুন মোটরবাইক পাওয়া যাবে শোরুম থেকে। শোরুমে সেই সরল ছেলেটিকে নিয়েও যায় খয়েরবাড়ির তরুণ। কাগজপত্র জমা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর শোরুমের বাইরে গিয়ে সরল ছেলেটিকে সেই চতুর তরুণ বোঝায়, ‘ওরা বাইক দেবে না, তুই বাড়ি যা।’ ততক্ষণে কাগজপত্র জমা হয়েছে এবং ওই ছেলেটির নামে ব্যাংক ফিন্যান্স করে দিয়েছে। এদিকে, চতুর তরুণ বাড়ি ফেরে নতুন মোটরবাইক নিয়ে। দ্রুত সেটিকে বন্ধক দিয়ে বিয়ের খরচের টাকা জোগাড় করে নেয়। সেই সরল ছেলেটি এব্যাপারে কিছুই জানেন না। এদিকে, কয়েকদিন পর কিস্তি বকেয়া পড়ায় ব্যাংকের এজেন্ট হাজির হয় সরল ছেলেটির বাড়িতেই। কারণ তাঁর নামেই রয়েছে সেই বাইকটি। এলাকায় হইচই পড়ে যায়।
‘মোটরবাইক জমা দাও, টাকা নিয়ে যাও।’ মাদারিহাটের ইসলামাবাদ গ্রামে দিনের পর দিন চলছে এই কারবার। সেই সরল ছেলেটি অবশ্য সেই যাত্রায় ব্যাংকের লোকজনের থেকে রেহাই পেয়েছিল, কারণ স্থানীয় বাসিন্দা এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা বৈঠক করে খয়েরবাড়ির তরুণের ওপরই বন্ধক দেওয়া মোটরবাইকের মালিকানা এবং ফিন্যান্সের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিলেন। তবে এটা তো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তা বলে মোটরবাইকের বন্ধকের কারবার বন্ধ হয়নি। বরং কমবয়সিদের চটজলদি টাকা পেতে মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়িয়েছে এইসব মোটরবাইক বন্ধক নেওয়ার কারবারিরা।
বাড়িতে মোটরবাইক জমা রেখে টাকা খাটাচ্ছে কয়েকজন। সুদের হার মাসে মাসে ৫ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত। সম্প্রতি ইসলামাবাদ গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ৬টি চোরাই মোটরবাইক উদ্ধার করে মাদারিহাট থানার পুলিশ। এবার মোটরবাইক বন্ধকের কারবারের দিকে নজর দিক পুলিশ প্রশাসন, বলছেন স্থানীয়রা।
মাদারিহাট-বীরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রশিদুল আলম বলছেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা অবৈধ কারবার। কারণ একজনের মোটরবাইক অপর একজন ব্যবহার করতে পারেন না। এই মোটরবাইকে দুর্ঘটনা ঘটলে বিমা সহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা পেতে আইনি জটিলতার সম্ভাবনা রয়েছে।’ মাদারিহাট থানার ওসি অসীম মজুমদার বলছেন, ‘একজনের মোটরবাইক অপর একজন ব্যবহার করলে অথরাইজেশন প্রয়োজন। তবে বাইক বন্ধকের কারবার সম্পর্কে তথ্য নেই। খোঁজ নিচ্ছি।’
রশিদুলই জানালেন, কেউ কেউ নতুন মোটরবাইক কিনে বন্ধক দিয়ে সুদের চুক্তিতে টাকা নিচ্ছে। কারণ, ব্যাংক ফিন্যান্সে মোটরবাইক কিনতে ডাউনপেমেন্ট হিসেবে নামমাত্র টাকা দিতে হয়। কিন্তু ওই নতুন মোটরবাইক বন্ধক দিলে হাতে মেলে নগদ টাকা। এইদিকে কিস্তির টাকা বাকি পড়তে থাকে। কিস্তি দিতে না পারলে মোটরবাইক নিয়ে যায় ঋণদাতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তাতে তো কোনও ক্ষতি হচ্ছে না বাইক মালিকের। কারণ তাঁর প্রয়োজন ছিল ঋণের।
কয়েক মাস আগে শিশুবাড়ির এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে বেশ কয়েকটি মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করে মাদারিহাট থানার পুলিশ। সেই ব্যক্তি দাবি করেন, মোটরবাইকগুলি চোরাই নয়, সেগুলি বন্ধক নিয়ে সুদের বিনিময়ে মালিকদের টাকা দিয়েছেন। ইসলামাবাদ গ্রামের পশ্চিম এলাকার এক তরুণ মোটরবাইক বন্ধকের কারবারের গোদা। তৃণমূলের খয়েরবাড়ির অঞ্চল কমিটির সভাপতি জবাইদুল ইসলাম বলছেন, ‘কারবারটা বেআইনি হলেও চলছে। উঠতি প্রজন্মের টাকার চাহিদা বেড়েছে।’
নিষিদ্ধ কাফসিরাপ উদ্ধার এবং গ্রেপ্তারির ঘটনায় সাম্প্রতিককালে একাধিকবার ইসলামাবাদ গ্রামের নাম উঠে এসেছে। শেষ সংযোজন এই বন্ধকি কারবার। গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য ইউসুফ আলি বলছেন, ‘কোনও অবৈধ কারবারই চলতে দেওয়া উচিত নয়। বারবার বেআইনি কাজে এলাকার নাম যুক্ত হওয়ায় অস্বস্তিতে স্থানীয়রা।’