নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: ছানার কপাল মন্দ। মা যে নতুন সঙ্গীর প্রেমে মত্ত। মায়ের সেই সঙ্গী আবার সেই ছানাকে একদমই দেখতে পারে না। কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেই তেড়েফুঁড়ে আসে। তার হানায় কোমরে জোর আঘাত পেয়ে বছর পাঁচেকের সেই ছানা এখন রীতিমতো মৃত্যুর সঙ্গে যুঝছে। সম্প্রতি নালায় পড়ে গিয়ে এখন উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু নেই। প্রেমে পাগল হয়ে মা-ও যেন কেমন হয়ে গিয়েছে। ছানাটির চিকিৎসার জন্য বনকর্মীরা হাতি নিয়ে সেটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বিপদের আশঙ্কায় মা তেড়ে আসছে। সঙ্গে সেই সঙ্গীও।
জলদাপাড়া(Jaldapara) নর্থ রেঞ্জের ৫০ ফুট বিটে গন্ডার(Rhino) শাবককে কেন্দ্র করে এই ঘটনায় বেশ হইচই শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বন দপ্তর অবশ্য জান লড়িয়ে দিচ্ছে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভির বক্তব্য, ‘আমাদের ধারণা, পেটে কৃমি হওয়ায় শাবকটি খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসক আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।’
গন্ডার শাবকরা সাধারণত সাত বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধের ওপরই পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। এই ছানাটিও ছিল। এতদিন সবই ঠিক ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে এই শাবকটির মায়ের এক সঙ্গী জোটার পর থেকেই সমস্যার শুরু। সেই সঙ্গী শাবকটিকে কিছুতেই তার মায়ের কাছে যেতে দিচ্ছে না। বেশ কয়েকবার সে ওই শাবকের ওপর হামলাও চালিয়েছে। শাবকটি এখনও ঘাস খাওয়া শেখেনি। তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে মায়ের দুধই ভরসা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বনকর্মীরা বেশ কয়েকবার হাতি নিয়ে শাবকটির কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রতিবারই তাঁদের নিরাশ হতে হয়েছে। সঙ্গী তো বটেই খোদ সেই মা গন্ডারও বনকর্মীদের দিকে বারে বারে তেড়ে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ঠিক কী করলে সবকিছু ঠিক হবে তা বনকর্মীদের জানা নেই। বছরের এই সময়টা সাধারণত গন্ডারদের প্রজননের সময়। আর তাতেই বিপদ হয়েছে বলে বনকর্মীদের একাংশ মনে করছেন। প্রাণী চিকিৎসক উৎপল শর্মা বললেন, ‘শাবকটিকে বাঁচাতে হলে সেটিকে দাঁড় করানো প্রয়োজন। দুর্গম জায়গায় হাতির পিঠ থেকে নামা সম্ভব হচ্ছে না। নামলেই মা গন্ডার আক্রমণ করতে পারে। আপাতত দূর থেকেই শাবকটিকে যতটা সম্ভব নানা ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।’
শাবকের বিষয়ে গন্ডার, হাতিরা সাধারণত খুবই যত্নশীল। কিন্তু এই ছানাটির কপাল সত্যিই মন্দ।